মহামারির পর দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

কৃষি ও সেবা খাতে কম প্রবৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক ৯৭ শতাংশ। করোনা মহামারি শুরুর অর্থবছর বাদ দিলে গত ৩৪ বছরের মধ্যে তা সর্বনিম্ন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির সময় দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল তিন দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ইকোনোমিক রিভিউর তথ‍্য অনুসারে, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল তিন দশমিক ২৪ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ছিল তিন দশমিক ৩০ শতাংশ।

সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ৫৮ বেসিস পয়েন্ট কমে হয়েছে চার দশমিক ৫১ শতাংশ ও শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৮৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে চার দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূল্যায়নটি বাস্তবসম্মত। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির একই পূর্বাভাস দিয়েছে।'

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যখন চলতি অর্থবছরের বাজেট তৈরি করে তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরে অন্তর্বর্তী সরকার তা সংশোধন করে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনে।

চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক তিন দশমিক তিন শতাংশ ও এডিবি তিন দশমিক নয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ বছরের শুরু থেকে 'রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও কারখানা বন্ধ থাকাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ছিল নাজুক।'

ফলে জিডিপিতে কম প্রবৃদ্ধি সেই বাস্তবতার প্রতিফলন বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়লে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কম হতে বাধ্য।

গত এপ্রিলে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বিশ্বব্যাংক বলেছে—সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মন্দা দেখা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার সঙ্গে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। বেসরকারি খাতের ঋণ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে। এটি গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক পরিসংখ্যান বলছে—সার্বিক বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত ছিল ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা ছিল ৩০ দশমিক সাত শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা ছিল ২৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ভয়াবহ বন্যার কারণে প্রথম প্রান্তিকে কৃষি খাত বড় সংকটে পড়েছিল।

এতে আরও বলা হয়, তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য শিল্প কর্মকাণ্ড মন্থর।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলছে—মূল্যস্ফীতি কমাতে অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর মুদ্রানীতি নেয় ও নীতিহার বাড়িয়ে দেয়।

এডিবি বলছে—রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে কারখানা বন্ধ থাকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় মন্দা দেখা দিয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক পরিসংখ্যান আরও বলছে—সেবা খাতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে চার দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা ছিল পাঁচ দশমিক ৭৭ শতাংশ। পরিবহন খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে চার দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা ছিল পাঁচ দশমিক ১৫ শতাংশ। আবাসন খাতে প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ৪৯ শতাংশ যা গত অর্থবছরের প্রায় সমান।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক ৩২ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা ছিল এক দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে গ্যাস খাতের প্রবৃদ্ধি আরও কম।

অর্থনীতির আকার দাঁড়িয়েছে ৪৬২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ছিল ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২০ ডলার। গত অর্থবছরে তা ছিল দুই হাজার ৭৩৮ ডলার।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত শ্বেতপত্র তৈরি কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করেন, জিডিপির আকার ও মাথাপিছু আয় পর্যালোচনা করা উচিত। কারণ এগুলো এখনো 'বাড়তি ও ত্রুটিপূর্ণ'।

'আমরা প্রতিবেদনে প্রশ্ন তুলেছি যে জাতীয় হিসাবে পদ্ধতিগত সমস্যা আছে। কারণ সেগুলো হালনাগাদ তথ্য ছাড়াই ভুল অনুমানের ভিত্তিতে ও ভুল পদ্ধতিতে গণনা করা হয়েছিল।'

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে—১৯৯৫ সাল থেকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অতিরঞ্জিত হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর থেকে তা আরও বাড়িয়ে বলা হয়েছে।

তিনি শ্বেতপত্রের সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় হিসাবের ভুল ধরতে স্বাধীন তথ্য কমিশনের দাবি জানান।

Comments

The Daily Star  | English
Domestic violence killing women in Bangladesh

Domestic violence in Bangladesh: When numbers speak of the silence

When we are informed that 133 women have been killed by their husbands in seven months, it is no longer just a number.

7h ago