নকল কসমেটিকস: বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, কমছে রাজস্ব আয়

দেশে বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল কসমেটিকস পণ্য তৈরি করে বিদেশি পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা হয়। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই অসংগতির কথা।
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

দেশে বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল কসমেটিকস পণ্য তৈরি করে বিদেশি পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা হয়। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই অসংগতির কথা।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আমদানিকারকদের প্রাইসট্যাগ ফেলে দিয়ে প্রাইসগান মেশিনের সাহায্যে খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন কর্তৃক নিষিদ্ধ অথবা অনুমোদনহীন ফেস ক্রিম, হোয়াইটেনিং ক্রিমসহ অন্যান্য কসমেটিকস পণ্য বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, কসমেটিকস পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য, উপাদান, পরিমাণ, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকে না।

এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে অধিদপ্তর।

সম্প্রতি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেশব্যাপী ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধে কসমেটিকস পণ্যের বিষয়ে বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে তারা এসব অসংগতি খুঁজে পেয়েছেন।

অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নকল ও অনুমোদনহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ কসমেটিকস পণ্য ব্যবহার করে চর্মরোগসহ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছেন ভোক্তারা। তাদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই অধিদপ্তর সম্প্রতি দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় কসমেটিকস পণ্য আমদানি না করায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ না থাকায় দামের দিক থেকে ভোক্তারাও প্রতারিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে বৈধ ও অবৈধ আমদানিকারক, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে, যেখানে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গত ১২ অক্টোবর অধিদপ্তরের সভাকক্ষে কসমেটিকস পণ্য আমদানিকারক, বাজারজাতকারী ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, লাগেজ ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক কম শুষ্ক দিয়ে বিদেশি পণ্য আমদানি করেন। কসমেটিকস পণ্যের আমদানিকারকদের হয়ে ফ্রেইট এজেন্সিগুলো এতে জড়িত থাকে। কিছু পণ্যের শুল্ক বেশি থাকায় বাজারে অনেক সময় সেসব পণ্যের সরবরাহ কমে যায়। তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা সেসব পণ্য নকল করে বাজারে ছাড়েন।

কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতা দূর হলে নকল পণ্য তৈরির প্রবণতা কমবে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

কিছু কাস্টমস কর্মকর্তার সহযোগিতায় ফ্রেইট এজেন্সিগুলো অবৈধভাবে অনেক পণ্য ছাড়িয়ে নেয়। এতে সুষ্ঠু ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বপ্ন, মিনা বাজার, ইউনিমার্ট, আগোরার মতো সুপার শপের প্রতিনিধিরা জানান, তাদের সুপার শপে বিক্রি হওয়া আমদানিকৃত কসমেটিকস পণ্যে আবশ্যকীয় সব তথ্য উল্লেখ থাকে।

প্রতিবেদনটিতে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কসমেটিকস পণ্য আমদানি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা ও সঠিক মানদণ্ড নিশ্চিত করতে বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।

এতে আরও বলা হয়েছে, নকল কসমেটিকস পণ্য বিক্রি রোধে অধিদপ্তর, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে। আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতাদের প্রদত্ত সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কেউ যেন কসমেটিকস বিক্রয় না করে সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে হবে।

গবেষণা সংস্থা লাইট ক্যাসল পার্টনার্স এবং অ্যালাইড মার্কেট রিসার্চ জানিয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে আনুমানিক ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্কিনকেয়ার ও কসমেটিক পণ্য বিক্রি হয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে এই পরিমাণ ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে তারা প্রাক্কলন করছে।

প্রসাধনী আমদানিকারক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনী আমদানি করে।

Comments