দেশে দামি গাড়ি বিক্রিতে ধীর গতি

গাড়ির দাম
ছবি: সংগৃহীত

দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) ও বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রিতে ধীর গতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

সরকার, ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট খাতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দামি গাড়ির প্রধান ক্রেতা হলেও গত দেড় বছরে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় এর বিক্রি কমেছে।

সরকার খরচ কমানোর উদ্যোগ নিলে তা বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রিতেও প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির তথ্য অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে এসইউভি ও বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩৫টিতে। গত বছর ছিল ৮৫৩টি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দামি গাড়ির মধ্যে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার বিক্রি হয় প্রায় ৬০ শতাংশ।

দেশের বাজারে মিতসুবিশি পাজেরো ২০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে।

এইচএনএস অটোমোবাইলসের হেড অব অপারেশনস শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৮ মাসে তাদের এসইউভি ও বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গড়ে ২৬ শতাংশ কমেছে।

সংস্থাটি জাপানি অটোমোবাইল ব্র্যান্ডগুলোর রিকন্ডিশন্ড মডেল আমদানি এবং বিক্রি করে।

তিনি আরও বলেন, 'এমনকি প্রিমিয়াম গ্রাহকরাও চলমান অর্থ সংকটের মধ্যে বেশি দামের কথা বিবেচনায় রেখে দামি গাড়ি কিনছেন না।'

'বিক্রি কমার আরেকটি কারণ হলো—কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতারা পছন্দের মডেল খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ, এলসি খোলায় অসুবিধার কারণে আমদানি অনেক কমেছে,' যোগ করেন তিনি।

তার মতে, গত এক বছরে ঘাটতির কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ২৬ শতাংশ কমে যাওয়ায় গাড়ির দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

প্রগ্রেস মোটরস ইমপোর্ট লিমিটেডের কান্ট্রি লিড (সেলস) সাফায়েত বিন তৈয়ব ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২২ সালের নভেম্বর থেকে প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭টি গাড়ি বিক্রি করতে পেরেছি। আগে বিক্রি হতো ১২টি গাড়ি।'

এলসি খোলায় অসুবিধার কারণে জার্মান ব্র্যান্ড অডির স্থানীয় পরিবেশক প্রগ্রেস মোটরসের আমদানিও কমেছে। তাদের ক্রয়ের বিপরীতে ১০০ শতাংশ অগ্রিম দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সিকিউরিটি মানি জমা দিতে হয়।

দ্বিতীয়ত, গাড়ির মালিকদের কার্বন ট্যাক্স দিতে হয় বলে তা গ্রাহকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে দামি গাড়ির চাহিদা কমেছে।

বাংলাদেশে জার্মানির মার্সিডিজ-বেঞ্জের একমাত্র অনুমোদিত পরিবেশক র‌্যাংকন মোটরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী রেদওয়ানুল জিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি মাসে গড়ে বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ কমেছে।'

তিনি জানান, এখন তারা প্রতি মাসে ২ থেকে ৩টি গাড়ি বিক্রি করতে পারছেন। আগে এই সংখ্যা ছিল ৮টির মতো।

রেদওয়ানুল জিয়া আরও বলেন, 'ইউরোপে মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বর্তমানে একটি মার্সিডিজ-বেঞ্জ গাড়ির দাম আগের তুলনায় ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা বেশি।'

'এই মডেলগুলো আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠায় সম্ভাব্য ক্রেতারা এ থেকে দূরে সরে আছেন' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মন্দা বাজারের কারণে দামি গাড়ি বিক্রি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।'

অন্যদিকে, জার্মান অটোমোবাইল কোম্পানি বিএমডব্লিউর গাড়ি বিক্রি গত ৮ মাসে প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

মেঘনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এক্সিকিউটিভ মোটরস ৯০ লাখ থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের বিএমডব্লিউর বেশ কয়েকটি মডেলের গাড়ি বিক্রি করে থাকে।

এক্সিকিউটিভ মোটরসের হেড অব সেলস আব্দুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে প্রতি মাসে আমাদের এখান থেকে ৭ থেকে ৮টি গাড়ি বিক্রি হচ্ছে।'

এই প্রেক্ষাপটে, গতকাল শনিবার এক্সিকিউটিভ মোটরস বহুল প্রত্যাশিত বিএমডব্লিউ এক্সওয়ান মডেল বাজারে এনেছে। এটি স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি ভেহিকেল (এসএভি)।

১ কোটি ২ লাখ টাকা মূল্যের নতুন বিএমডব্লিউ এক্সওয়ানে আছে কম্প্যাক্ট ১ দশমিক ৫ লিটার ইঞ্জিন। এর ফ্রন্ট হুইল ড্রাইভে আছে টুইন পাওয়ার টার্বো প্রযুক্তি।

এর ইঞ্জিনের সঙ্গে আছে ৭ ধরনের গতিবেগ নির্বাচনের সুবিধা ও ডাবল ক্লাচ ট্রান্সমিশন। এর সমন্বয়ে ১৩৬ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন ক্ষমতা পাওয়া যায়।

এসএভি মাত্র ৯ দশমিক ২ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার (প্রতি ঘণ্টা) বেগে চলে এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০৮ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Seven killed in Mymensingh road crash

At least seven people were killed and several others injured in a head-on collision between a bus and a human haulier in Mymensingh’s Phulpur upazila last night

1d ago