যে কারণে দেশে ‘বেকারের সংখ্যা’ কমছে

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

দেশে বেকারের সংখ্যা কমেছে। অর্থাৎ, অনেক মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। তবে বিশ্লেষকরা এ নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কারণ, বেশিরভাগ প্রবৃদ্ধি আসছে কৃষিখাত থেকে।

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, শিল্প ও সেবাখাতে চাকরির সুযোগ পর্যাপ্ত হারে বাড়ছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০ হাজার বা ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ২৫ লাখে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ নয়। কারণ, এর অর্থ হচ্ছে আনুষ্ঠানিকখাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়গুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না।'

তার মতে, 'মনে হয়, আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'শিল্পখাতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব আছে। তাই বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করছেন।'

গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দেশে চাকরিজীবীর সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৭০ হাজার।

তবে সেবাখাতে কর্মসংস্থান আগের বছরের একই সময়ে ২ কোটি ৭৫ লাখ ছিল। এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখে।

অন্যদিকে, একই সময়ে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান ৪০ হাজার বেড়ে ১ কোটি ২১ লাখে দাঁড়িয়েছে।

গত মাসের শেষের দিকে প্রকাশিত বিবিএসের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থান ৩ কোটি ৮০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ।

জরিপের তথ্য বলছে, কৃষিখাত এখনো দেশের কর্মসংস্থানের প্রধান উত্স। এটি সামগ্রিক কর্মসংস্থানের ৪৪ শতাংশ।

জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মসংস্থানবিষয়ক সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি প্রত্যাশার বিপরীত।'

সেবাখাতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া উন্নয়নের স্বাভাবিক ধারার সঙ্গে 'সাংঘর্ষিক' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এটি উন্নয়নের ধারার বিপরীত।'

রিজওয়ানুল ইসলাম জানান, সামগ্রিকভাবে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান সামান্য বাড়লেও প্রকৃতপক্ষে উৎপাদনখাতে এই সংখ্যা কম হতে পারে।

তিনি আরও জানান, মোট দেশজ উৎপাদনে দেশের ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় সামগ্রিক কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। এটি খুবই কম।

এছাড়াও, শ্রমশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কম।

'কিন্তু, অনানুষ্ঠানিকখাতে কর্মসংস্থানের প্রকৃত চিত্র জানা যায়নি। কারণ, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি,' যোগ করেন তিনি।

শ্রমবাজারে উন্নয়নের একটি মূল সূচক হলো মজুরির প্রকৃত চিত্র। এটি গত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্রমাগত কমছে।

অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, 'এই সব বিবেচনায় নিলে দেশে বেকারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আনন্দিত হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না। এ ধরনের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে খুবই কম জানা যায়।'

বিবিএসের সংজ্ঞায় বলা হয়, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই যারা গত ৭ দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টাও কোনো কাজ করেননি। কিন্তু, গত ৭ দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন/মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন।

'তাই প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝার জন্য বিকল্প সূচক প্রয়োজন,' বলেন রিজওয়ানুল ইসলাম।

বিবিএসের জরিপে আরও বলা হয়েছে, পুরুষদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়লেও নারীদের মধ্যে বেকারত্ব কমেছে।

অর্থনীতিবিদ মনসুরও একমত হন যে, বিবিএসের বেকারত্বের সংজ্ঞা থেকে প্রকৃত পরিস্থিতি জানা যায় না।

তিনি বলেন, 'আমরা যদি কর্মসংস্থানের সঠিক চিত্র জানতে পারি তাহলে প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে পারব।'

আইএলওর গাইডলাইনে যিনি কাজ করছেন অথচ প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না (সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছেন না) তাকে আন্ডার এমপ্লয়মেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়।

লেবার ফোর্স সার্ভের প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, আইএলওর বেকারত্বের সংজ্ঞা মেনে বিবিএস এই গবেষণা চালিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'আগামী সেপ্টেম্বরে আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতে পারে। সেখানে বিবিএসের দৃষ্টিতে আন্ডার এমপ্লয়মেন্টের সংখ্যা বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump says Iran has 'maximum' two weeks, dismisses Europe peace efforts

Israel's war with Iran entered its second week on Friday with the Israeli military chief warning of a "prolonged campaign"

2h ago