‘স্মার্ট দেশ গড়তে ডিম, দুধ ও মাংসের প্রাপ্যতা বাড়াতে হবে’

তারা বলেন, উন্নত দেশের মানুষ যেখানে বছরে গড়ে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০টি ডিম খায় সেখানে সরকারি হিসাবে আমাদের দেশে এ সংখ্যা ১৩৬টি।
প্রোটিন, ডিম, দুধ, মাংস, ডক্টরস’ ডায়ালগ,
ডক্টরস’ ডায়ালগ অন রাইট টু প্রোটিন ডায়ালগে শীর্ষক সেমিনার। ছবি: সংগৃহীত

ডক্টরস' ডায়ালগ অন রাইট টু প্রোটিন ডায়ালগ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা জানিয়েছেন, বুদ্ধিমান ও স্বাস্থ্যবান জাতি গড়তে হলে প্রোটিনের প্রাপ্যতা বাড়াতেই হবে। উন্নত দেশের মানুষ যেখানে বছরে গড়ে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০টি ডিম খায় সেখানে সরকারি হিসাবে আমাদের দেশে এ সংখ্যা ১৩৬টি। শুধুমাত্র হাঁস ও মুরগির ডিমের হিসাব করলে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক কম।

সেমিনারে বক্তারা আরও জানান, আমাদের দেশে মুরগির মাংসের প্রাপ্যতা উন্নত দেশের তিন ভাগের এক ভাগ। দুধের মাথাপিছু দৈনিক প্রাপ্যতা ২৫০ মিলি লিটারের বিপরীতে মাত্র ২২২ মিলি লিটার। তাই ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ডিম, দুধ, মাংসের মাথাপিছু প্রাপ্যতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্সেস (বিএউএইচএস), বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

বিএউএইচএসের উপাচার্য প্রফেসর ডা. ফরিদুল আলম বলেন, 'আপাত বিচারে মাথাপিছু আয় কম হওয়াকে প্রোটিন বা পুষ্টি ঘাটতির কারণ হিসেবে দায়ী করা হলেও, সচেতনতার অভাবকেও এ দায় থেকে মুক্ত করা যায় না।'

'বেসরকারি এমনকি সরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতেও ডিম কিংবা দুধের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে না অথচ প্রতিবেশী দেশে প্রচারিত চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করছে। প্রচারেই প্রসার। তাই জনসচেতনতা বাড়াতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে আরও এগিয়ে আসতে হবে,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সাইন্সেস জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মো. ফজলুর রহমান বলেন, 'তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে মানুষকে কোনো বিষয়ে অবহিত করা আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ হয়েছে। তবে আচরণে পরিবর্তন আনা অনেক কঠিন একটি কাজ। আশার কথা হলো অধিকাংশ মানুষ এখনো ডাক্তার, পুষ্টিবিদ কিংবা হেলথ প্রফেশনালদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করেন। তাই প্রোটিন ও পুষ্টি বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়াতে ডাক্তার ও হেলথ প্রফেশনালদের এগিয়ে আসতে হবে।'

ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশ টিম প্রধান খাবিবুর রহমান কাঞ্চন বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। পুষ্টি সূচকে উন্নতি করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র পাল্টে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করতে হলে আমাদেরকে স্বল্প জায়গায় এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে অধিক পরিমাণ মাছ, মাংস, ডিম উৎপাদনের কথা ভাবতে হবে।'

ওয়ার্ল্ড'স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব প্রামাণিক বলেন, 'পশ্চিম ইউরোপের দেশ মোনাকোর মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। চীনের একজন মানুষ ৭৫ বছর বয়সেও অনেক বেশি কাজ করতে পারেন। নেদারল্যান্ডসের মানুষেরা এখনকার মত এতটা লম্বা ছিল না। অলিম্পিকের মেডেল তালিকায় আমেরিকা এবং ইউরোপই শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বহুকাল কারণ তারা পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করেন।'

'এক শলাকা সিগারেটের দাম ১৫ থেকে ১৮ টাকা অথচ পৃথিবীর প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন একটি ডিমের দাম ১৩ টাকা হলেই তুলকালাম কাণ্ড বেধে যায়। এ মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে,' বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. খালেদা ইসলাম বলেন, 'জাতি গঠনের প্রেক্ষাপটে প্রতিটি নাগরিকের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। প্রোটিনের ঘাটতি একটি শক্তিশালী জাতিকেও দুর্বল জাতিতে পরিণত করতে পারে।'

বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন নাহার নাহিদ মহুয়া বলেন, 'ডিম নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যেমন- ডিম খেলে হার্টের সমস্যা হয়, প্রেশার হয়, শরীর মোটা হয়ে যায়, অপারেশনের রোগীকে ডিম দেয়া যাবে না, বয়স্কদের ডিম-মাংস দেওয়া যাবে না; ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া ঠিক নয় ইত্যাদি। অথচ ডিম ও দুধ হচ্ছে সুপার ফুড। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির মাংস হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর মাংস।'

বিইউএইচএসের পাবলিক হেলথ ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, 'দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে নেতিবাচক প্রচারণা বাদ দিয়ে ইতিবাচক প্রচারণাকে গুরুত্ব দিতে হবে।'

আজকের সেমিনারে প্রায় ২৫০ জন ডাক্তার, পুষ্টিবিদ, হেলথ প্রফেশনাল ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

Comments