টানা মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও সরকারের খাদ্যশস্য বিতরণ কমেছে

ছবি: সংগৃহীত

গত দুই বছর ধরে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সরকারি খাদ্য বিতরণ আগের বছরগুলোর তুলনায় প্রায় ছয় শতাংশ কমেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, খাদ্য অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির মাধ্যমে মাত্র ১৩ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল ও গম বিতরণ করেছে।

গত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে ১৪ লাখ ৬৩ হাজার টন খাদ্য বিতরণ করেছিল, এটি তার চেয়ে অনেক কম।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে খাদ্য বিতরণ পরিকল্পনা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার টন থেকে কমিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ লাখ তিন হাজার টনে নামিয়ে আনে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল। বিশেষ করে, ক্রমবর্ধমান খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি অক্টোবরের ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কম আয়ের মানুষদের জন্য খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। কিন্তু সরকার এ থেকে সরে আসছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কম পরিমাণে খাদ্যশস্য বিতরণ যৌক্তিক নয়। কারণ গত বছরের তুলনায় এ বছরের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ভয়াবহ।'

খাদ্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'মূল্যস্ফীতি কম আয়ের মানুষদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।'

খাদ্য বিতরণের বিষয়ে সরকারের তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত শ্বেতপত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'কীভাবে খাদ্য বিতরণের তথ্য বিশ্বাস করতে পারি যখন দেখি সবকিছুই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল?'

তিনি বলেন, 'এটা স্পষ্ট যে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে। সর্বস্তরের মানুষ এখন দুর্ভোগে পড়েছে।'

তথ্যে দেখা যায় যে, খাদ্য বিতরণ কমার বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত।

গত বছর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় কাবিখা কর্মসূচির আওতায় ৫২ হাজার ৭৪২ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করেছিল। এ বছর বিতরণ হয়েছে মাত্র ৬৮ টন।

আসাদুজ্জামানের মতে, 'সরকার হয়তো খাদ্যশস্য মজুদের সংকটে ভুগছে।'

একই ভাবনা বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনূসের। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও বিতরণের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক আছে। সরকারকে ক্রয় প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সময়মতো আমদানির ওপর জোর দিতে হবে।'

সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সময়মতো খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে পারে না, ফলে মজুদ কম থাকে।

বিআইডিএস গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, 'মনে হচ্ছে কর্মকর্তারা ক্রয় সভায় যে দাম নির্ধারণ করেন সে দামে তারা খাদ্যশস্য পাচ্ছেন না।'

তার মতে, বাজারের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনেরও প্রভাব আছে। এখন বাজারের ধরন পাল্টে গেছে। আগে কৃষকরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পণ্য বিক্রি করতেন। এখন তারা সময় নিচ্ছেন।

'যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সরকারকে সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মজুদ বাড়াতে সরকারকে খাদ্যশস্য আমদানিতে মনোযোগ দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সম্ভাবনা আছে।'

'তথ্য অসম্পূর্ণ' দাবি করে খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আব্দুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তথ্য হালনাগাদ হলে সার্বিকভাবে খাদ্যশস্য বিতরণ বাড়তে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর ওপেন মার্কেট সেলস (ওএমএস) কর্মসূচির অনেক ডিলার পালিয়ে যাওয়ায় এ উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়।'

কাবিখা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'স্থানীয় সরকারের কাজ ব্যাহত হওয়ায় এটি বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে।'

তবে বন্যাকবলিত জেলাগুলোর দিকে নজর দিয়ে খাদ্যশস্য বিতরণ কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, 'কোনো কার্যক্রমই বন্ধ নেই। এ বছর বিতরণ আরও বাড়বে।'

Comments

The Daily Star  | English

A floating mosaic of guavas, baskets and people

During the monsoon, Jhalakathi transforms into a floating paradise. Bhimruli guava market comes alive with boats carrying farmers, buyers, and tourists.

11h ago