ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে যেসব বাধা

সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ভবনের ছাদে ৩,০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে আন্তর্জাতিক জ্বালানি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইএফএ) বলছে, এই লক্ষ্য অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন হবে। তাদের মতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে।

ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের লক্ষ্যকে 'উচ্চাভিলাষী' অভিহিত করে সংস্থাটি বলছে, মান নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা, উচ্চ আমদানি শুল্ক, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সীমা এবং অর্থায়নের মতো সমস্যায় খাতটি এখনো জর্জরিত।

'ছাদে সৌরবিদ্যুতের বাংলাদেশের জেগে ওঠার সময়' শীর্ষক এই নোটে আইইএফএ বলেছে, নতুন কর্মসূচির সাফল্য নির্ভর করবে ছাদে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা সঠিকভাবে মূল্যায়ন, জোরদার মনিটরিং এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করার ওপর।

গত জুনে সরকার ২০০৮ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি সংশোধন করে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ ও ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সরকার ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং একটি জাতীয় কর্মসূচি শুরু করে।

নতুন কর্মসূচিতে ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার (ক্যাপেক্স) মডেলে সরকারি অফিসগুলোতে ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, অপারেশনাল এক্সপেন্ডিচার (ওপেক্স) মডেলে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে আইইএফএ বলছে, এই উদ্যোগটি বড় ধরনের অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। এর মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত ভবনগুলোর ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের সম্ভাবনা নিরূপণ, ক্যাপেক্স মডেলে রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা এবং লোডশেডিংয়ের সময় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'অন্যথায়, অপর্যাপ্ত তথ্য ও ঝুঁকির আশঙ্কায় ডেভেলপাররা সরকারি টেন্ডারে সামান্যই আগ্রহ দেখাতে পারে।'

ছাদে প্রথম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৮ সালে। এর পর থেকে বাংলাদেশে ছাদে মোট ২৪৫ মেগাওয়াট প্যানেল স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০৯ মেগাওয়াট স্থাপিত হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে, বছরে যার গড় মাত্র ৩০ মেগাওয়াট। আইইএফএ বলছে করেছে, 'নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্যানেল স্থাপনের হার ১২ গুণেরও বেশি বাড়াতে হবে।'

ব্রিফিংয়ে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ছাদে সৌরবিদ্যুৎ সম্পর্কে এখনো নেতিবাচক ধারণা আছে। তদারকি না থাকায় বাজারে নিম্নমানের প্যানেল ও সরঞ্জাম বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে এই প্রযুক্তির ওপর সামগ্রিকভাবে আস্থা কমে যাচ্ছে।

আইইএফএ উল্লেখ করেছে যে, সোলার পণ্যে উচ্চ আমদানি শুল্ক এই খাতে অগ্রগতিকে ধীর করে রেখেছে। যদিও জুনে ইনভার্টারের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে, তবে এফআরপি ওয়াকওয়ে, মাউন্টিং স্ট্রাকচার এবং ডিসি কেবলের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক রয়ে গেছে।

এছাড়া, ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের ক্ষমতা একটি শিল্পের অনুমোদিত লোডের ৭০ শতাংশে সীমাবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, ১ মেগাওয়াট অনুমোদিত লোডসহ একটি কারখানা, ছাদে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও ০.৭ মেগাওয়াটের চেয়ে বড় প্ল্যান্ট স্থাপন করতে পারে না।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, 'এই সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবন বড় আকারের প্ল্যান্ট স্থাপন করে সাশ্রয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।'

ছাদে সৌরবিদ্যুৎ বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় এবং বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে নিয়ে যেতে একে একটি 'সহজলভ্য সুযোগ' হিসেবে দেখা হলেও সোলার পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান না করা হলে এই খাত তার সম্ভাবনা পূরণে ব্যর্থ হবে।

Comments

The Daily Star  | English

With acreage and output falling, is there any prospect for wheat in Bangladesh?

Falling wheat acreage raises questions about food security amid climate change

15h ago