‘চট্টগ্রামের ৮ জেলায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করেই দেশের সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব’

চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে বেলা এবং ক্লিন আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

'চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জেলার মাত্র ৩২ শতাংশ খাস জমিতেই ১৪ হাজার ৯১৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, যা বর্তমানে দেশের মোট চাহিদার প্রায় সমান।'

আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং ক্লিন আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য প্রদান করা হয়।

'বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুতের সম্ভাবনা: ভূমি স্বল্পতার অজুহাত ও বাস্তবতা' শীর্ষক এই সেমিনার বলা হয়, শুধুমাত্র নোয়াখালীতেই সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯১৬ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্লিনের প্রধান নির্বাহী মেহেদী হাসান।

তিনি বলেন, 'জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগের ৮টি জেলায় ৭ লাখ ৯০ হাজার ৩৬১ দশমিক ৭১ একর খাস জমি আছে। যার মধ্যে ৮৪ হাজার ১২৪ দশমিক ৯৫ একর জমি কাউকে বরাদ্দ দেওয়া নেই। এই জমি প্রয়োজন হলে বরাদ্দ করা যেতে পারে। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলা কমিশন খাস জমি সম্পর্কিত তথ্য দেয়নি। তারা জানিয়েছে, তারা খাস জমির তথ্য রাখে না।'

গবেষণার বিশ্লেষণ অনুসারে, জিআইএস ম্যাপিংয়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে মাত্র ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ জমি—৩৫ হাজার ৩৫৬ দশমিক ১৩ একর—মাউন্টেড সোলার ফটোভোলটাইক্সের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই জমিতে অন্তত ১৪ হাজার ৯১৫ মেগাওয়াট গ্রাউন্ড মাউন্টেড সোলার পিভি স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। নোয়াখালীতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯১৬ দশমিক ৯২১ মেগাওয়াট এবং লক্ষ্মীপুরে সর্বনিম্ন ২৩৫ মেগাওয়াট সোলার পিভি স্থাপন করা যেতে পারে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, যদি মাত্র ১০ শতাংশ ছাদের জায়গা ব্যবহার করা সম্ভব হয়, তাহলে চট্টগ্রাম বিভাগে কমপক্ষে ১০ দশমিক ৪৯৯ কোটি বর্গমিটার ছাদ পাওয়া যাবে। ১ মেগাওয়াট রুফটপ সোলার স্থাপনের জন্য গড়ে ৮ হাজার ৬৫৫ বর্গমিটার আয়তন প্রয়োজন হয়। সুতরাং, বিভাগে কমপক্ষে ১০ হাজার ৮৩৭ মেগাওয়াট রুফটপ সোলার স্থাপন করা যেতে পারে।

গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে প্রদত্ত বক্তব্যে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'দেশে বর্তমানে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে চলমান বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধিকাংশ পরিচালিত হয় জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে, যা পৃথিবীর ওজন স্তরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আগে সরকার বলতো, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় দেশে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা দুরূহ। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, জায়গার অভাব নেই। সরকার ইচ্ছে করলেই শতভাগ পূণর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।'

'সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ, ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ পূণর্ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, আমরা তার শতভাগ বাস্তবায়ন চাই,' যোগ করেন তিনি।

গবেষণা প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন চুয়েটের ইলেক্ট্রিকস ও ইলেক্ট্রোনিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন গবেষণা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যুৎ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার সাঈদ পারভেজ, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়েত সৌরভ, প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates' remittance helps Bangladesh make turnaround: Yunus

It is the expatriates who help sustain the country, says the chief adviser

1h ago