‘ঘুমাবার সাধ’

রিকশার সিটকে বালিশ বানিয়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকা এই শ্রমজীবী মানুষটির গভীর ঘুমের জন্য যে কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয়নি, তা হয়তো নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
জীবনানন্দ মনে করতেন ‘ঘুমের মাঝে মৃত্যুর মতন শান্তি আছে’। তাই জেগে থেকেও ‘ঘুমাবার সাধ’ ভালোবেসেছিলেন তিনি।
ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

জীবনানন্দ মনে করতেন 'ঘুমের মাঝে মৃত্যুর মতন শান্তি আছে'। তাই জেগে থেকেও 'ঘুমাবার সাধ' ভালোবেসেছিলেন তিনি। লিখেছিলেন, 'আমাদের রক্তে ঘ্রাণ/আমাদের রক্তে রূপ-স্বাদ/মুছে যাক; ক্লান্ত হয়ে ঘুমাবার সাধ/আসুক চোখের 'পরে…।

মানুষ তার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। এই 'সাধের' ঘুমের সঙ্গে মানুষের শরীর ও মনের সুস্বাস্থ্যের সম্পর্ক আছে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, এ যন্ত্রকাতর নগরসভ্যতায় ভালো ঘুম না হওয়া, ঘুমে সমস্যা হওয়ার কিংবা গভীর ঘুম না হওয়ার সমস্যাটিও প্রকট।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য বলছে, ঘুম না হলে মানুষ ক্লান্ত বোধ করে, মনোযোগ ও সতর্কতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া নিদ্রাহীনতার কারণে মানুষ অনেক সময় স্মৃতিভ্রষ্ট কিংবা হতাশ হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ঘুম কম হলে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ কয়েক ধরনের ক্যানসার বেড়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়।

গত বছর বিশ্বখ্যাত 'নেচার' সাময়িকীর সায়েন্টেফিক রিপোর্টে বাংলাদেশের মানুষের ঘুম নিয়ে ছাপা হওয়া এক গবেষণা প্রবন্ধে দেখানো হয়, বাংলাদেশের মানুষের ঘুমের সমস্যাটি বেশি প্রকট হয়েছে করোনাকালে। ওই প্রবন্ধে করোনা মহামারি শুরুর আগে-পরের দুটি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়, কম সময় ঘুমানো মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভালো ঘুমের জন্য ওষুধনির্ভর হয়ে পড়ার বিপজ্জনক প্রবণতার কথাও জানাচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশ।

তবে দুই কোটি মানুষের এ ঢাকা মহানগরে রিকশার সিটকে বালিশ বানিয়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকা ছবির এই শ্রমজীবী মানুষটির গভীর ঘুমের জন্য যে কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয়নি, তা হয়তো নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

ছবিটি আজ শনিবার জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন খেজুরবাগান এলাকা থেকে তোলা।

Comments