প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে অগ্রাধিকার শেয়ারে পরিণত করবে পদ্মা ব্যাংক

পদ্মা ব্যাংক পিএলসি প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে অগ্রাধিকার শেয়ারে রূপান্তর করতে যাচ্ছে
পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থপাচার, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত,

পদ্মা ব্যাংক পিএলসি প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে অগ্রাধিকার শেয়ারে রূপান্তর করতে যাচ্ছে এবং যেসব গ্রাহক আমানত তুলে নিতে ইচ্ছুক তাদের সরবরাহ করবে।

কোনো কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ শেয়ারের চেয়ে অগ্রাধিকার শেয়ার অগ্রাধিকার পায়।

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অর্থসহ পদ্মা ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক আমানত আছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

গত জানুয়ারিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বিষয়টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রিয়াজ খান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করতে যাচ্ছি।'

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত সমন্বয়কের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ আমানতকে শেয়ারে রূপান্তরের নির্দেশনা দিয়েছে।

'আমানত থেকে শেয়ারে রূপান্তর একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং আমরা এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি,' বলেন তিনি।

পদ্মা ব্যাংক (আগের নাম ফারমার্স ব্যাংক) ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আর্থিক অনিয়মের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকটি থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে।

ফলে, তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহাবুবুল হক চিশতীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য আমানতকারীরা টাকা তুলে নিতে শুরু করে।

এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বরে তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সরকার ২০১৮ সালে ব্যাংকটি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়।

এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক ৭১৫ কোটি টাকায় ব্যাংকটির ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।

শেয়ার কিনে নেওয়ার পর নতুনভাবে শুরু করতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। কিন্তু পুনরায় ব্র্যান্ডিং ব্যাংকটিতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেনি। বরং দিন যত যাচ্ছে ততই এর আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে।

গত বছর শেষে ব্যাংকটির অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে মন্দ ঋণ ছিল ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঋণ অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি শনাক্তে ব্যাংকগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাতটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে পদ্মা ব্যাংক আছে।

সবশেষ গত মাসে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এরপর সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বেসরকারি ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমানতকে অগ্রাধিকার শেয়ারে রূপান্তরের বিষয়ে তিনি কিছু শোনেননি।

তিনি বলেন, 'আমানতকারীরা এই পরিবর্তনের সম্মতি দিয়েছেন কি না তাও দেখতে হবে। যদি এ ধরনের সম্মতি না দেওয়া হয়, তাহলে তা হবে আমানতকারী ও ব্যাংকের মধ্যে চুক্তির লঙ্ঘন। যা ব্যাংকিং খাতের রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।'

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি খারাপ নজির স্থাপন করতে পারে, কারণ ব্যাংকগুলো অর্থের অপব্যবহার করতে পারে এবং পরে সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার শেয়ারে পরিণত করতে পারে।

'এতে শুধু ব্যাংকই দুর্বল হবে না; বরং ব্যাংক খাতের আস্থার ওপর আরেকটি আঘাত আনবে,' বলেন তিনি।

পদ্মা ব্যাংকের আমানতকে অগ্রাধিকার শেয়ারে পরিণত করার অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, আমানতকারীরা চাইলে একটি ব্যাংক আমানতকে অগ্রাধিকার শেয়ারে রূপান্তর করতে পারে।

পদ্মা ব্যাংকের একজন বোর্ড পরিচালক, যিনি নিজেও অভিজ্ঞ ব্যাংকার তিনি বলেন, 'আমি আমার জীবনে এমন কিছু দেখিনি।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমি মনে করি না, এই উদ্যোগ কোনো সফলতা বয়ে আনবে, কারণ আমানতকারীরা এ বিষয়ে একমত নাও হতে পারেন। তাই পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে এ উদ্যোগ বাতিল হতে পারে।'  

Comments