সমবায় ব্যাংক থেকে যেভাবে ১১ হাজার ভরি স্বর্ণ আত্মসাৎ হলো

সমবায় ব্যাংক, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, দুর্নীতি দমন কমিশন,

বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ২০২১ সালের আগে দুই হাজার ৩১৬ গ্রাহকের বন্ধক রাখা ১১ হাজারের বেশি ভরি (প্রতি ভরি ১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম) স্বর্ণ আত্মসাৎ করেছেন। তখন আত্মসাৎ করা স্বর্ণের মূল্য ছিল ৪০ কোটি টাকার বেশি।

মহিউদ্দিন আহমেদ মহিকে সহযোগিতা করেন সমবায় ব্যাংকের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এখানে উল্লেখ্য, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার কোটবাড়িতে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ স্বর্ণ আত্মসাতের বিষয়টি আলোচনায় আনেন।

তিনি বলেন, 'সমবায় ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা করে আমি ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ আত্মসাতের তথ্য জানতে পারি। বিষয়টি তদন্তে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শেষ করে একটি মামলা দায়ের করেছিল।

মামলার এজেহারে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহিসহ আট ব্যাংক কর্মকর্তার নাম আছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মহিউদ্দিন আহমেদ মহি নেই। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আখতারুল ইসলাম বলেন, 'মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।'

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ও অন্যরা প্রতারণার মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ার পাশ কাটিয়ে ২ হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের বন্ধক রাখা সাত হাজার ৩৯৮ ভরি ১১ আনা স্বর্ণ আত্মসাৎ করেন।

সমবায় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল গনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যতদূর জানি দুই হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের সাত হাজার ৩৯৮ ভরি ও ১১ আনা বন্ধকি স্বর্ণ আত্মসাৎ করা হয়েছে, এটি স্বর্ণের নিট ওজন। তবে মোট ওজন ১১ হাজার ভরি ছাড়িয়ে গেছে।'

এ বিষয়ে জানতে মহিউদ্দিন আহমেদ মহির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন

তদন্তকালে সমবায় ব্যাংকের ঢাকা শাখার অনুমোদন পাওয়া বন্ধকী স্বর্ণ ফেরত চাওয়া ৪৫৫টি আবেদন সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেছিল দুদক।

এতে দেখা গেছে, এর মধ্যে মাত্র ১২০টি আবেদন প্রকৃত মালিকরা করেছেন, বাকি ৩৩৫টি আবেদনে স্বাক্ষরে অসঙ্গতি দেখা গেছে এবং সংশ্লিষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি।

তদন্তে জানা গেছে, এই ব্যক্তিরা প্রকৃত মালিকদের পরিবর্তে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বন্ধকী স্বর্ণ সরিয়েছে। এভাবে ওই সময় আট কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের এক হাজার ৫৯৪ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণ আত্মসাৎ করা হয়।

তদন্তে আরও দেখা যায়, ব্যাংক কর্মকর্তারা সহযোগিতা না করলে তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডও তাদের গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকে রেখেছিল। সেই বন্ধকী স্বর্ণের জন্য দুদক এক হাজার ৯৮৪টি আবেদন খুঁজে পেয়েছে। যেগুলো ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছিল। অথচ এই আবেদনগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি আবেদন বৈধ ছিল।

বাকি আবেদনগুলোর স্বাক্ষর ও পরিচয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে। ফলে, এখান থেকে পাঁচ হাজার ৮০৩টি ভরি ১৩ আনা স্বর্ণ আত্মসাৎ করা হয়েছে, যার মোট মূল্য ৩১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

সব মিলিয়ে দুই হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকার স্বর্ণ আত্মসাৎ করা হয়। কিন্তু বন্ধকী পরিশোধ করায় এই প্রতারণার ফলে আত্মসাতের অঙ্ক দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল গনি বলেন, 'যখন ব্যাংকের চেয়ারম্যানই প্রধান অপরাধী, তখন ব্যাংকের পক্ষে কিছু করার থাকে না। তবে সব আসামিকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে এবং তাদের কাউকেই ব্যাংকে ফিরিয়ে আনা হয়নি।'

তার ভাষ্য, 'বর্তমান বোর্ড যে কোনো নতুন তদন্তে সহযোগিতা করবে।'

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

1h ago