সিইটিপি সমস্যা ও বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন কম

কাজ ও আয় কমেছে সাভারের ট্যানারি শ্রমিকদের

ছবি: স্টার

প্রতিটি কারখানাকে সপ্তাহে ৩ দিন কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ রাখা, রোববার কারখানা বন্ধ ও লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কমেছে সাভারের বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারি কারখানাগুলোতে। কাজ কমে যাওয়ায় আয় কমেছে ট্যানারি শ্রমিকদের।

ট্যানারি শ্রমিক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (৩০) কাজ করেন বিসিক চামড়া শিল্পনগরী সাভারের একটি ট্যানারি কারখানায়। তিনি সেখানকার স্থায়ী শ্রমিক। মজুরি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুযোগ সুবিধাসহ তার মাসিক বেতন ১৪ হাজার ৩৪০ টাকা। কারাখানা ঠিকমতো চলছে অভারটাইমসহ মাসে তার আয় হয় ২৫-২৬ হাজার টাকা। গত জুন মাসে তিনি বেতন ও অভারটাইমসহ ২৫ হাজার টাকা আয় করেছিলেন। জুলাই মাসে কাজ কমে যাওয়ায় তার আয় হয় ১৭ হাজার টাকা। আগস্ট মাসে তিনি ১৪ হাজার ৩৪০ টাকার বেশি তুলতে পারবেন না বলে মনে করছেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালানো নিয়ে চিন্তিত নাজিম উদ্দিন। 

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নাজিম উদ্দিন বলেন, '১০ বছর ধরে ট্যানারি কারখানায় কাজ করি। আমি এখানকার স্থায়ী শ্রমিক। আমাদের বেতন কম, মূল আয়টা নির্ভর করে ওভারটাইমের ওপর। কারখানায় কাজ বেশি থাকলে, অভারটাইমসহ ২৫-২৬ হাজার টাকা আয় হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'এখন তো চামড়ার মৌসুম, প্রতিবছর এই সময় আমরা কারখানায় কাজ করে দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু বিদ্যুতের ঝামেলার কারণে জুলাই মাস থেকে কারখানায় উৎপাদন কম। এরপর চলতি মাসে কারখানায় সপ্তাহে ৩ দিন করে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে আমাদের বেতনের বাইরে আর আয় হবে না। দৈনন্দিন জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বাসাভাড়া বেড়েছে কিন্তু আমাদের আয় কমে গেছে।'

নাজিম বলেন, 'সব পণ্যের দাম বাড়ায় খরচ বেড়ে গেছে। এখন জমানো টাকা ভেঙে সংসার চালাতে হবে। খুব চিন্তায় আছি।'

ট্যানারি শ্রমিক মিন্টু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি গত ৩ বছর ধরে ট্যানারি কারখানায় অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার বেতন ৯ হাজার ৪৫০ টাকা। কাজে অনুপস্থিত থাকলে বেতন আরও কমে যায়। সঙ্গে অভারটাইম করতে পারলে বেশি টাকা পারিশ্রমিক তুলতে পারেন। 

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাভারের ট্যানারিতে ৮-১০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের বেতন অনেক কম। কারখানায় উৎপাদন কমে গেলে শ্রমিকরা বেতনের বাইরে খুব বেশি আয় করতে পারেন না। দৈনন্দিন জিনিসপত্রের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে সবাই খুব কষ্টে আছেন।' 

তিনি বলেন, 'আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়ে আসছি সরকাররে কাছে। যেখান থেকে শ্রমিকরা অল্প মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারবে। কিন্তু সেই দাবি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। জিনিসপত্রের দাম যে পরিমাণ বাড়ছে, শ্রমিকদের এই আয়ে তা কেনার সক্ষমতা নেই।'

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনর (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ্ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিইটিপির কারণে বর্তমানে রেশনিং পদ্ধতিতে কারখানা চালাতে হচ্ছে। অর্থাৎ সপ্তাহে প্রতিটি কারখানাকে ৩দিন কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সিইটিপির ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার। সবগুলো ট্যানারি একসঙ্গে কাঁচা চামড়া প্রসেস করলে ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এ কারণে রেশনিংয়ের মাধ্যমে কারখানা পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে আমোদের উৎপাদনও প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। এ ছাড়া বৈদুতিক ক্রাইসিসের কারণে প্রতি সপ্তাহে রোববার ঘোষণা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমাদের আর্থিকভাবে প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।'

এতে শ্রমিকরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারখানায় উৎপাদন কমে গেলে শ্রমিকরা অভারটাইম পান না, শুধু বেতন পান বলে জানান বিটিএ'র সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ।

 

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

8h ago