পাথর আমদানি বন্ধ, বুড়িমারীর ২৫ হাজার শ্রমিকের কর্মহীন দিন

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে কর্মহীন শ্রমিক। ছবি: সংগৃহীত
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে কর্মহীন শ্রমিক। ছবি: সংগৃহীত

দর কমানোর দাবি না মানায় পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে ভারত ও ভুটানের বোল্ডার স্টোন (বড় বড় পাথর) আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। এ কারণে কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে ২৫ হাজার শ্রমিক।

এ শ্রমিকরা ভারত ও ভুটান থেকে নিয়ে আসা পাথর লোড-আনলোডের পাশাপাশি তা মেশিনে ভাঙার কাজ করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির ৮০ শতাংশ দখল করে আছে এই পাথর-বাণিজ্য। আমদানি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন দেড় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সেই সঙ্গে পাথর আমদানির মতো বিপুল কর্মযজ্ঞ থেমে যাওয়া অনেকটা নিশ্চল দেখাচ্ছে বন্দরের কার্যক্রম।

বন্দরের পাথর শ্রমিক আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই বন্দরে প্রায় ৫০০ পাথর ভাঙার যন্ত্র আছে। প্রতি যন্ত্রে গড়ে ২০-৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রত্যেকে পান ৫০০ টাকা করে। আমদানি বন্ধ থাকায় মেশিন চলছে না। ফলে সবার দৈনিকের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে।

লোড-আনলোড শ্রমিক মমিনুল ইসলাম জানালেন, বন্দরে তার মতো শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ হাজারের মতো। এই কাজ করে শ্রমিকরা দৈনিক ৬০০-৭০০ টাকা করে পান।

মমিনুল বলেন, 'হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়ায় খুব কষ্টে দিন কাটছে। একদিন কাজ না করতে পারলে অন্যের কাছ থেকে ধার করতে হয়। এখন মহাজনের কাছ থেকে অগ্রিম মজুরি নিয়ে চলছি।'

বন্দরের পাথর ব্যবসায়ী নূর ইসলামের চারটি পাথর ভাঙা মেশিন আছে। চারটি মেশিনে কাজ করেন ১০৫ জন শ্রমিক। আমদানি বন্ধ থাকায় তারাও বসে আছেন।

নূর ইসলাম জানালেন, অনেক শ্রমিক তার কাছ থেকে অগ্রিম মজুরি নিয়েছেন। আবার আমদানি না থাকায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঠিকাদার কিংবা অন্য পাথর ব্যবসায়ীদের পাথর সরবরাহ করতে পারছেন না তিনি।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

বুড়িমারী স্থলবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হোসেনের ভাষ্য, ভারত ও ভুটানের পাথর রপ্তানিকারকরা প্রতি টন বোল্ডার স্টোনে ১-২ ডলার বেশি নিচ্ছিলেন। এতে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। দর কমানোর আশ্বাস দিলেও রপ্তানিকারকরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে তারা আমদানি বন্ধ রেখেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে ফারুক হোসেন বলেন, 'দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।'

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার বোল্ডার স্টোন আমদানি করা হতো। আমদানি বন্ধ হওয়ায় আমরা বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারাচ্ছি। এতে প্রভাব পড়ছে শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার ওপরেও।'

পাথর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান এই বন্দর কর্মকর্তা।

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

3h ago