জিআই পণ্যের বাণিজ্যিক সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্টদের প্রথমে জিআই পণ্যগুলোর জন্য লোগো ও নির্দিষ্ট প্যাকেট তৈরি করা উচিত। এরপর তাদের উচিত ক্রেতা সংগঠনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনে পণ্যগুলো তালিকাভুক্ত করে প্রচার, ব্র্যান্ডিং ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া।
জিআই পণ্য, জিআই ট্যাগ, জামদানি, টাঙ্গাইল শাড়ি, মসলিন,
স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, জিআই স্বীকৃতি পণ্যের ভালো দাম পেতে সহায়তা করে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, ব্যবসায়ী সংগঠন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অংশীজনদের ব্যর্থতার কারণে জামদানি, ঢাকার মসলিন ও ইলিশের মতো জিআই স্বীকৃতি পাওয়া পণ্য থেকে বাংলাদেশ কোনো সুফল পাচ্ছে না। ছবি: স্টার

কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত ও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পাওয়া পণ্যগুলো থেকে বাংলাদেশ এখনো কোনো সুফল নিতে পারেনি। অথচ জিআই স্বীকৃতি পণ্যের সুনাম ও ভোক্তাদের আস্থা বাড়ায় এবং বেশি দাম পেতে সহায়তা করে।

ভৌগোলিক নির্দেশক (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩ প্রণয়নের পর থেকে দেশে ইতোমধ্যে ২১টি পণ্যকে জিআই হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে।

এছাড়া ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পাওয়ার খবর প্রকাশের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মাত্র আট দিনে আরও ১০টি পণ্যকে একই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

ভারত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পাওয়ায় বাংলাদেশে সমালোচনা হয় এবং ঐতিহ্যগত হাতে বোনা পোশাকের সঠিক দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের জিআই স্বীকৃতির পাওয়ার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।

ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউআইপিও) তথ্য অনুযায়ী, অনেকে পণ্য কেনার সময় সেগুলোর উৎসকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আর কোনো পণ্যেরে উৎস ও সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে জিআই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, জিআই স্বীকৃতি পণ্যের ভালো দাম পেতে সহায়তা করে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, ব্যবসায়ী সংগঠন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অংশীজনদের ব্যর্থতার কারণে জামদানি, ঢাকার মসলিন ও ইলিশের মতো জিআই স্বীকৃতি পাওয়া পণ্য থেকে বাংলাদেশ কোনো সুফল পাচ্ছে না।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি আইনের পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ আতাউল করিম বলেন, 'সাধারণত বিশ্ববাজারে জিআই সনদ পাওয়া পণ্যের দাম একই ধরনের পণ্যের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি থাকে।'

'বিশ্বব্যাপী গ্রাহকরা জিআই পণ্যের পেছনে অতিরিক্ত ব্যয় করতে ইচ্ছুক।'

জিআই একটি পণ্যের সত্যতা ও তার উৎস চিহ্নিত করে। আর এই স্বীকৃতি যেকোনো পণ্যের উৎস, জলবায়ু, সংস্কৃতি, উৎপাদন পদ্ধতি এমনকি কাঁচামালের মতো বিষয়গুলো অনন্য বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্টদের প্রথমে জিআই পণ্যগুলোর জন্য লোগো ও নির্দিষ্ট প্যাকেট তৈরি করা উচিত। এরপর তাদের উচিত ক্রেতা সংগঠনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনে পণ্যগুলো তালিকাভুক্ত করে প্রচার, ব্র্যান্ডিং ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া।

তবে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) এক কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে সংস্থাটি নারায়ণগঞ্জে শত শত বছর ধরে উৎপাদিত জামদানিকে এই সনদ প্রদান করে। বাংলাদেশের জন্য যা ছিল প্রথম জিআই স্বীকৃতি।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, জামদানি শাড়িতে এখনো জিআই ট্যাগ লাগানো হয়নি। ২০১৯ সালে জিআই সনদ পাওয়া রংপুরের শতরঞ্জিরও একই অবস্থা।

বিসিকের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) অখিল রঞ্জন তরফদার বলেন, বিসিক ডিপিডিটির সহযোগিতায় শতরঞ্জির জিআই লোগো ডিজাইন ও প্যাকেজিং করছে।

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া জিআই ট্যাগযুক্ত পণ্য রপ্তানির জন্য জামদানি শাড়ির কারিগরদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য আমরা ডিপিডিটির সঙ্গে কাজ করছি।'

২০১৭ সালে ইলিশ মাছ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে বাগদা চিংড়ি জিআই স্বীকৃতি পায়।

মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, 'এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী ইলিশ বা বাগদা চিংড়িতে জিআই ট্যাগ ব্যবহার করে বিক্রি করেননি।'

ডাব্লিউআইপিও'র পরামর্শক করিম বলেন, যদিও ডিপিডিটি জিআই পণ্য নিবন্ধনের জন্য দায়বদ্ধ, তবে পণ্যগুলোর প্রচারের দায়িত্ব বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাণিজ্য সংস্থা, ব্যবসায়ী ও উত্পাদনকারীসহ অন্যান্য অংশীজনদের।

তিনি আরও বলেন, 'জিআই পণ্যের সুবিধা পেতে ব্যর্থতার জন্য  উৎপাদনকারীর সক্ষমতার অভাব, আর্থিক সীমাবদ্ধতাসহ কখনো কখনো নিম্নমানের পণ্যকেও দায়ী করা হয়।'

'সার্বিকভাবে আমরা জিআই ইস্যুটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি।'

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ২০২০ সালে ঢাকার মসলিনের জিআই স্বীকৃতি পেলেও জিআই ট্যাগযুক্ত কাপড়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন এখনো শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে মসলিনের প্রচুর চাহিদা থাকায় বেসরকারি খাত জিআই ট্যাগ ব্যবহার শুরু করলে বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া যাবে।'

কৃষিপণ্যের মধ্যে ২০১৭ সালে অশ্বিনা, ল্যাংড়া, ফজলি ও খিরসাপাত (হিমসাগর নামেও পরিচিত) নামে চারটি আমের জাত জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো জিআই ট্যাগযুক্ত আম রপ্তানি হয়নি।

জিআই পণ্যের প্রচার, ব্র্যান্ডিং ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ডিপিডিটির মহাপরিচালক মুনিম হাসান।

তিনি বলেন, 'অন্যান্য অংশীদাররা এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন।'

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, জিআই স্বীকৃত পাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে এমন পণ্য নিবন্ধনের উদ্যোগ নিচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এরপর আমরা পণ্যের বাণিজ্যিক ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করব।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago