বাটার শীর্ষ দশ ব্যবসায়ী দেশের একটি বাংলাদেশ

বাটা, বাটা জুতা, বাটা সু,
রাজধানীতে বাটার একটি আউটলেট। স্টার ফাইল ফটো

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বাটা জুতার শীর্ষ দশ বাজারের একটি হলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সন্দীপ কাটারিয়া মনে করেন, এ দেশে এই প্রতিষ্ঠানটির বাজার আরও বাড়ানো সুযোগ আছে।

তার মন্তব্য, 'এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাজার।'

শীর্ষ দশ বাজারের মধ্যে বাংলাদেশ কোন অবস্থানে আছে তা না জানালেও তিনি বলেন, 'গত বছর বাংলাদেশ র‌্যাংকিংয়ে এগিয়েছে।'

গত সপ্তাহে ঢাকা সফরকালে দ্য ডেইলি স্টারকে সাক্ষাৎকারে সন্দীপ কাটারিয়া বলেন, 'এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির ভালো ব্যবসা ও কয়েকটি দেশে ডলার প্রভাবের কারণে তারা ব্যবসা ভালো করতে না পারায়।'

স্বাধীনতার প্রায় এক দশক আগে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে বাটা সু।

তিনি আরও বলেন, 'গত ৬২ বছরে আমরা বাংলাদেশের ক্রেতাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। তারপরও আমরা আগামী দিনে এ দেশের আরও প্রবৃদ্ধির সুযোগ দেখতে পাচ্ছি।'

প্রতিষ্ঠানটির এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাটার কয়েকজন ম্যানেজারের ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। তার ভাষ্য, 'আমাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে, এমন দাবি করাই যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দেখছি। শুধু বিক্রির জন্য নয়, এ দেশ থেকে কাঁচামাল কেনার বিষয়েও।'

ব্যবসা ও বিপণনে খ্যাতি অর্জন করা সন্দীপ কাটারিয়ার অভিজ্ঞতা আছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। খুচরা পণ্য বিক্রিতে তার অভিজ্ঞতা ২৫ বছরেরও বেশি সময়ের।

তিনি ভারতের ভোডাফোনসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ২০১৭ সালে তিনি বাটা ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন।

দিল্লির আইআইটির প্রকৌশলী সন্দীপ কাটারিয়া ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাটা শু অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী প্রজন্মের জন্য গড়ে তোলার কাজ করছেন তিনি।

দুই বছর পর এবার তিনি বাংলাদেশে এসে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। দেশে-বিদেশে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে যেতে পারছে।

তিনি মনে করেন, বৈশ্বিক জুতা শিল্পে বাংলাদেশ কাঁচামাল সরবরাহের কেন্দ্র হতে পারে।

সন্দীপ কাটারিয়া বলেন, 'আমাদের দুটি বড় কারখানায় অনেক জুতা তৈরি হয়। আমাদের কয়েকটি পার্টনার আছে। আমরা তাদের মধ্যে কয়েকটিকে বিশ্বজুড়ে আমাদের বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং অংশীদার করতে চাই। তারা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের জন্য জুতা বানাবে।'

বাটার কাছে বাংলাদেশকে যে বিষয়গুলো আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে তা হলো অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি। কাটারিয়া মনে করেন যে আরও দুটি জিনিস আছে যার কারণে বাংলাদেশ হতে পারে জুতা শিল্পের গ্লোবাল হাব।

এর মধ্যে একটি হলো কোম্পানিগুলোর জন্য এমন কিছু কাঁচামাল সংগ্রহের সুযোগ করে দেওয়া যা বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়। তাই কাঁচামালের শুল্ক কাঠামোর দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ আছে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো—স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনীর দিকে জোর দিতে হবে। কেননা, ক্রেতারা সব সময় নতুন ডিজাইন চান।

তিনি বলেন, 'বাজারে নতুন ডিজাইন ও পণ্য আনতে আমাদের সঙ্গে কাজ করা যেতে পারে।'

তিনি বাংলাদেশকে ভাগ্যবান হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারণ, এ দেশে উত্পাদন খরচ তুলনামূলক কম। তার মতে, 'এসব বিষয় বাংলাদেশকে আমাদের জন্য কাঁচামাল সরবরাহের ভালো কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে।'

২০২৩ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে বাংলাদেশে বাটার বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এক দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে ৭৫৪ কোটি টাকা হয়। একই সময়ে মুনাফা ৫৩ শতাংশ বেড়ে হয় ৪২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশে জুতা ব্যবসার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন কাটারিয়া।

করোনা মহামারির কারণে মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জুতা ব্যবসা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি কমেছে।

'উচ্চ মূল্যস্ফীতি ক্রেতাদের পকেটের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করায় তারা অনেক সময় কী কিনতে খরচ করবেন তা বিবেচনায় নিচ্ছেন।'

বাড়তি দাম পণ্য বিক্রিকে প্রভাবিত করে। মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের দাম বাড়ে। আবার কিছু ক্রেতা আছেন যারা আরও ভালোমানের পণ্যের জন্য অপেক্ষা করেন।

গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেও বাটা সু'র (বাংলাদেশ) শেয়ারের দাম এক শতাংশ বেড়ে এক হাজার টাকা ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসের জন্য ৩৩০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

কাটারিয়া বলেছেন, বাটা সম্পর্কে বড় বিষয় হলো এটি যতটা বহুজাতিক তার চেয়ে বেশি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান।

'আপনি যদি পেরু, ইন্দোনেশিয়া বা বাংলাদেশের কাউকে জিজ্ঞেস করেন, তারা খুব সম্ভবত বলবেন যে বাটা দেশি প্রতিষ্ঠান। দেশ ভেদে আবহাওয়া ভিন্ন হওয়ায় একই জুতা সবার জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়।'

'ক্রেতাদের এমন কিছু দিতে হবে যা তারা চায়। যা আবহাওয়া ও দামের সঙ্গে খাপ খায়। আমরা সবসময় যা করার চেষ্টা করেছি তা হলো বিশ্বব্যাপী চাহিদার দিকে খেয়াল রাখা। আমরা সেগুলো স্থানীয় বাজারে তুলে ধরি।'

পণ্যকে আকর্ষণীয় করতে বাটা কর্মীদের উদ্ভাবনী সুযোগকে কাজে লাাগানোর ব্যবস্থা করে দেয়। বাংলাদেশে তাদের ৮৫ শতাংশের বেশি জুতা নিজেদের কারখানায় তৈরি হয়।

ব্যবসার স্থায়িত্ব সম্পর্কে সন্দীপ কাটারিয়া বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার ও পণ্য পুনর্ব্যবহারের চেষ্টা করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus joins stakeholders’ dialogue on Rohingya crisis in Cox’s Bazar

The three-day conference began with the aim of engaging global stakeholders to find solutions to the prolonged Rohingya crisis

1h ago