বন্দর
বেহাল দশা সড়কের

হিলি দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধের হুঁশিয়ারি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের

সংস্কার কাজের জন্য সড়ক খুঁড়ে রাখায় বর্ষার আগেই সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টিতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
হিলি
বেহাল দশায় হিলি বন্দর সংযোগ সড়ক। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

বেহাল দশার কারণে দিনাজপুরের হিলি বন্দর সড়কে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ কারণে সড়কটি দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ অবস্থায় সড়কটি শিগগির সংস্কার না করা হলে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

এ হুঁশিয়ারি দিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা গত বৃহস্পতিবার হিলির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একটি চিঠি দিয়েছে।

চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চিঠিতে বেহাল সড়ক দ্রুত সংস্কার না করা হলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।'

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এ হুঁশিয়ারির বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা প্রায় ৩ বছর ধরে বন্দরের এই সড়ক ঠিক করার কথা বলা আসছি। অবশেষে গত বছর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু করলেও, ঠিকাদারের গাফিলতি ও ধীরগতির কারণে তা শেষ করা সম্ভব হয়নি।'

'সংস্কার কাজের জন্য সড়ক খুঁড়ে রাখায় বর্ষার আগেই সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টিতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমদানি-রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের,' বলেন তিনি।

শনিবার বেহাল এ সড়ক পরিদর্শনে যান দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ। ছবি: স্টার

এদিকে, গত মঙ্গলবার বিকেলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে হিলি পানামা পোর্টে যাওয়ার সময় কাদাপানি ও খানাখন্দে ভরা সড়কটিতে উল্টে যায় একটি ভারতীয় ট্রাক। একইদিন সকাল ১১টায় এই সড়কে আটকে যায় বাংলাদেশের একটি ট্রাক। এ কারণে সেদিন বন্দর সড়কে যানজট সৃষ্টি হলে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা, ব্যাহত হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

জানা গেছে, স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হিলি চেকপোস্টের জিরো পয়েন্ট থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত সোয়া ২ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের কাজের প্রথম ধাপে সিসি ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

তবে কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারের গাফিলতির অভিযোগের কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে বলেন, সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ পরে কাঁচাপণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে। কেননা দুর্ভোগপূর্ণ সড়কে কাঁচামালবোঝাই ট্রাক আটকা পড়লে সেসব পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ভোগান্তির কারণে সাম্প্রতিককালে এ বন্দর দিয়ে তুলনামূলক পণ্য আমদানি কমে গিয়েছে বলেও জানান তারা।

এদিকে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বন্ধের হুঁশিয়ারির কথা জানার পর শনিবার হিলির দুর্ভোগপূর্ণ এ সড়ক পরিদর্শনে যান দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাকিল আহমেদ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আজিজ, হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায়, আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ এবং বাংলা হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন।

জানতে চাইলে দিনাজপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আজিজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আরসিসি রাস্তা হওয়ার কারণে কাজ একটু ধীর গতিতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে যানবাহন চলাচলে একটু সমস্যা হচ্ছে। ভোগান্তি কমাতে আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।'

জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ হবে আশা করি। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চলমান থাকবে। কাজ দ্রুত শেষ করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

'আশ্বস্ত করছি ভোগান্তি কমাতে এই কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা হবে। আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না,' বলেন জেলা প্রশাসক।
 

Comments