জুলাই মাসের অর্থনীতি: কেটে যাচ্ছে শঙ্কার কালো মেঘ

স্টার ফাইল ছবি

মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান ধারায় কিছুটা হলেও ছন্দপতন হয়েছে জুলাইয়ে। ফলে এ মাসে রেমিট্যান্স ও আমদানির পর তৃতীয় সূচক হিসেবে মূল্যস্ফীতি সরকারকে কিছুটা হলেও সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বস্তি দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ বছরের মধ্যে জুনে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ হওয়ার পর জুলাইয়ের শেষে কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যকে মূলত দায়ী করা হয়েছিল। এ সমস্যাও কিছুটা প্রশমিত হয়েছে বলা যায়। জুলাইয়ে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা আগের মাসের চেয়ে ১৮ বেসিস পয়েন্ট কম।

পল্লী অঞ্চলের তুলনায় শহরগুলোতে খাবারের দাম বেশি কমেছে। নগরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২৭ পয়েন্ট কমে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছে।

জুলাইতে খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে। ৬ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে এটি ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশের সময় জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমেছে এবং আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরও কমে আসবে।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, টানা ৬ মাস বাড়ার পর জুন থেকে আমদানির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। জুলাইতে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। মহামারির পর এটাই সর্বনিম্ন আমদানি বিল।

মূল্যস্ফীতি ও আমদানির বাড়তে থাকা ধারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে আসছিল।

তবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত রেমিট্যান্স জুলাই মাসে গত ১৪ মাসের রেকর্ড ভেঙে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। বৈদেশিক মুদ্রার আরেকটি উৎস রপ্তানি থেকেও গত মাসে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে।

গতকাল এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, ১-২ মাসের মধ্যে অর্থনীতিতে গতিবেগের সঞ্চার হবে এবং তা আগের ধারায় ফিরে আসবে। তবে অর্থনীতিবিদরা এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, 'যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কীভাবে আপনি বলতে পারেন যে, অর্থনীতি শিগগির আগের ধারায় ফিরে যাবে?'

সরকার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা করার জন্য কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে আছে প্রতিটি এলাকায় পূর্বনির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং।

লোডশেডিংয়ের কারণে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষের সেচ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে, যার ফলে আবারও খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে।

জুনে চলতি হিসাবে ঘাটতি ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'কিন্তু চলতি হিসাবের ঘাটতি ঠিক কতটুকু এবং কত দ্রুত কমবে, তা এ মুহূর্তে বলা খুব কঠিন। আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে, কিন্তু এ ধারা অক্ষুণ্ণ থাকে কি না, তা দেখার বিষয়।'

রিজার্ভের ওপর চাপও কমে আসতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। 

'এটি এসেছে মূলত চলতি হিসাবে ঘাটতি থেকে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নতুন কোনো বাধাবিঘ্ন না আসলে এই ঘাটতি কমে আসবে। গত ২ বছরে ১২ লাখ আনকোরা অভিবাসী কর্মী বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন। ফলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হওয়াতে আমদানি বিল কমে আসবে', যোগ করেন তিনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান জানান, অর্থনীতির যে অনিশ্চিত অবস্থা, তাতে সাধারণ মানুষ খুব শিগগির স্বস্তি পাবে না।

তিনি বলেন, 'যেহেতু মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বমুখী পর্যায়ে রয়েছে, তাই জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি কমলেও তা সাধারণ মানুষের ওপর থেকে চাপ কমাবে না না। এর সার্বিক প্রভাব এখনো অনেক বেশি।'

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে নির্ধারিত মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতির হার এখনো অনেকটাই এগিয়ে আছে।

'যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে তা মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ কমাবে', যোগ করেন তিনি।

তিনি সরকারকে হুন্ডি ও ভুয়া চালানের মাধ্যমে আমদানি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

তবে, জুলাই মাসের প্রকাশিত তথ্যে কিছু ভালো দিকও রয়েছে।

'আমরা ইতিবাচক লক্ষণ দেখছি। এই ধারা আরও ৩-৪ মাস স্থায়ী হয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে, আরও ২-৩ মাস পরে আমাদের একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকবে', বলেন মোস্তাফিজুর রহমান।

 

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

 

Comments

The Daily Star  | English

CU students lock main entrance after peer 'assaulted by locals'

They began a sit-in after locking the gate, forcing teachers and students to enter the campus on foot

41m ago