‘রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মই সবচেয়ে কার্যকর’
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটানোর অন্যতম সহজ উপায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো। আর বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করতে হবে। তবে সুবিধাভোগীদের কাছে তা নিরাপদে ও তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্লাটফর্মই হতে পারে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম।
আজ বুধবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে এমন অভিমত জানান বক্তারা।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংগঠনটির কার্যালয়ে 'বৈধপথে সহজে নিরাপদে ডিজিটাল মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে করণীয়' শীর্ষক এ সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা রেমিট্যান্স গ্রহণ করেন, তাদের ব্যাংকে গিয়ে লেনদেনের বিষয়ে এক ধরনের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব আছে। ফলে ঘরে বসেই অবৈধ পথে রেমিট্যান্স গ্রহণ করাকেও তারা অপেক্ষাকৃত সহজ মনে করেন।'
'বৈধপথে রেমিট্যান্স আনতে যারা কাজ করছে তাদের সঙ্গে প্রবাসীদের দূরত্ব কমাতে না পারলে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাবে না। এ জন্য সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে,' যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশের সঙ্গে সপ্তাহে ৩ দিন লেনদেন বন্ধ থাকছে। এ কারণে হুন্ডিতে লেনদেনের পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। সরকার এসব প্রথা ভেঙে একটা প্রবণতা চালু করতে চায়। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।'
সেমিনারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়াতে ডলারের বাজারে ভারসাম্য রাখতে হবে। বৈধ ও অবৈধ পথে ডলারের হারের পার্থক্য বেশি হলে প্রবাসী শ্রমিকরা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হন।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে তাদের দেশত্ববোধ বাড়ালে তারা বৈধ পথে ডলার পাঠাতে আগ্রহী হবেন। পাশাপাশি ডিজিটাল সেবা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে।'
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল এইচ খন্দকার।
তিনি বলেন, '২০১৯ ও ২০২০ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসা অনেক বেড়েছিল। সে সময় সরকার প্রণোদনা চালু এবং ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল। বর্তমানে রেমিট্যান্স আনতে বৈশ্বিকভাবে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি খরচ হচ্ছে। এটা কমিয়ে আনতে হবে। হুন্ডির মাধ্যমে দ্রুত ও অনেক কম খরচে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণেই তারা ওই পথ বেছে নিচ্ছেন।'
তিনি বলেন, 'বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে এমএফএসসহ ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবস্থা করতে পারলে খরচ ও সময় অর্ধেক কমানো সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স আসার পরেই তা ক্যাশ আউট হয়ে গেলে কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যাবে না। বরং ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করে ডিজিটাল মাধ্যমেই তা ব্যবহার করলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। এ জন্য দেশেও ডিজিটাল ফাইন্যান্স সেবা বাড়াতে হবে।'
এতে অংশ নিয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, 'রেমিট্যান্স ডিজিটাল মাধ্যমে দ্রুত আনা সম্ভব। অল্প সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডিজিটাল মাধ্যমের বিকল্প নেই। এই রেমিট্যান্স বাড়াতে পারলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে।'
সেমিনারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মি বলেন, 'শ্রমিকদের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে সহজে ও দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা গেলে তারা সে পথ বেছে নেবেন। যারা দেশে থেকেই রেমিট্যান্স আয় করেন তাদেরকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকের সংজ্ঞা নিয়েও কাজ করা প্রয়োজন।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউর সাবেক উপপ্রধান ইস্কান্দার মিয়া বলেন, 'অবৈধভাবে যে শ্রমিকরা বিদেশে গেছেন, তাদের টাকা কীভাবে বৈধ পথে আনা যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এমএফএস এজেন্টদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। টাকা পাচারের পথ বন্ধ করতেও উদ্যোগ নেয়া জরুরি।'
বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অব.) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বৈধপথে তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি প্রণোদনাসহ বিকাশে রেমিট্যান্স পাঠানোর সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের ৭০টি দেশ থেকে ৭৫টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে সেটেলমেন্ট হয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স আসছে।'
তিনি জানান, ২০২১ সালে বিকাশে ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা সমপরিমাণের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এ বছর শেষে তা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে গোলবৈঠক আলোচনা সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
Comments