২৫ শতাংশ বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে এসেছে রেকর্ড ২.৫২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

দেশের অর্থনীতি যখন সামষ্টিক চাপে বিপর্যস্ত, তখন রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে এসেছে স্বস্তির বার্তা। গত বছরের আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া রেমিট্যান্স অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেশ খানিকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর উল্লেখযোগ্য কারণ, প্রবাসী বাংলাদেশিরা রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'বাংলাদেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এটাই।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'রেমিট্যান্স বৃদ্ধি স্বস্তির খবর। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হবে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে।'

তিনি বলেন, 'রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি সরকারের জন্যও স্বস্তিদায়ক। কারণ, এর ফলে দেশের ঋণ পরিশোধের চাপ কমবে।'

২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছালেও, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তা কমে ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

গত তিন বছরে বাংলাদেশি মুদ্রার (টাকা) ৪২ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমে গিয়েছিল যে বিভিন্ন ব্যাংক এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতেও চরম সংকটে পড়েছিল। তবে, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিপিএম৬ হিসাব অনুযায়ী, রিজার্ভ ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'রেমিট্যান্স প্রবাহ আগামী মাসেও বাড়তে পারে। কারণ, সাধারণত রমজান ও ঈদের সময় রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, প্রবাসীরা কেবলমাত্র ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারিতেই মোট ১৫৩ মিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে হুন্ডি ও হাওয়ালার মতো অবৈধ মানি ট্রান্সফার চ্যানেলগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে এখন বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আসছে।'

গত পাঁচ বছরে প্রায় ৪৬ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে গেছেন, যা রেমিট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। প্রথমদিকে অনেকেই স্থিতিশীল চাকরি খুঁজে পাননি। তবে, পরবর্তীতে কর্মস্থলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিয়মিত অর্থ পাঠাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স রেকর্ড করা হয়, যার পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স ছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ২০২৪ সালের জুনে, ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

রেমিট্যান্স আরও বাড়াতে করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং তাদের যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে, কোন দেশগুলো নির্দিষ্ট দক্ষতার কর্মী চায় এবং সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানো উচিত।'

তিনি বলেন, 'উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব ২০৩৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। এত বড় ইভেন্টের জন্য তারা বিশাল বিনিয়োগ করবে, যা নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে। বাংলাদেশকে এই চাহিদার পূর্বাভাস অনুযায়ী পরিকল্পনা করা উচিত।'

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দক্ষ কর্মী পাঠানোর পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার খোঁজাও জরুরি। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো নতুন বাজারে প্রবেশের দিকে বাংলাদেশকে মনোযোগ দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

BNP shutting down Nagar Bhaban to realise demands by force: Asif Mahmud

Supporters of Ishraque today announced they would continue their sit-in tomorrow from 10:00am to 5:00pm

25m ago