গম আমদানি কমার সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা

গম। প্রতিকী ছবি: স্টার
গম। প্রতিকী ছবি: স্টার

বিশ্ববাজারে কমছে গমের দাম। কিন্তু বাংলাদেশে এর বিপরীত চিত্র। দাম কমার বদলে দেশে গমের দাম বাড়ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আমদানি কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে গমের দাম বাড়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, ডলার স্বল্পতায় গম আমদানিতে ব্যাংকগুলোর অর্থায়নে অনীহার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশে গমের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৮৫ শতাংশই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। বাকিটা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়।

বিগত অর্থবছরে শস্যের আমদানি এর আগের ৬ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। চলতি অর্থবছরেও একই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে থেকে অক্টোবরে গম আমদানির পরিমাণ ৪৯ শতাংশ কমে ১৭ লাখ ২০ হাজার টন হয়েছে।

প্রতিবেদনে রয়টার্সের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম এর আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ কমে প্রতি টনে ৩৭১ দশমিক ৪৮ ডলার হয়েছে।

গত ১ মাসেই গমের দাম ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ কমেছে। ২৩ অক্টোবর ১ টন গমের দাম ৩৯৫ ডলার ছিল।

এই সময়ের মধ্যে ঢাকায় আটার দাম প্রতি কেজিতে ৯ শতাংশ বেড়ে ৬০ থেকে ৬৩ টাকা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মূল্যবৃদ্ধি বৈশ্বিক ধারার বিপরীতে যাচ্ছে।

নিত্যপণ্য আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আটার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দরকে দায়ী করেছেন। তবে কর্মকর্তা ও ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, শুধুমাত্র ডলারের দামবৃদ্ধির কারণে স্থানীয় বাজারে আটার দামবৃদ্ধি হতে পারে না।

৩০ নভেম্বর ডলারের দাম ২১ শতাংশ বেড়ে ১০৩ টাকা ৬০ পয়সা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১ বছর আগে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আটার দাম ১ বছর আগের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেশি ছিল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গমের শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা দিচ্ছে। অর্থাৎ, ডলারের দাম বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মন্দা ও ভারতের গম রপ্তানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কারণ ছাড়া আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার অন্য কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার প্রত্যাশা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করে হিসাব করলে চলবে না।'

'এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাচ্ছে', বলে যোগ করেন তিনি।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে ঢাকায় আটার দাম বাড়ছে। জানুয়ারিতে প্রতি কেজি আটার দাম ছিল ৩৪ টাকা।

ভারত গত মে মাসে স্থানীয় বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গম রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের গম আমদানির বড় একটি উৎস প্রতিবেশী দেশটি। ফলে ভারতের এই উদ্যোগের বিরূপ প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে।

অক্টোবরে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে আটার দাম নতুন রেকর্ড করে। গত মাসে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানায়, এই মূল্যবৃদ্ধি আমদানি কমে যাওয়া ও উচ্চ পরিবহণ খরচেরই প্রতিফলন।

২০২১ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে সরকার ২ ধাপে ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে। পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্যের ওপর ভর্তুকি কমাতে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৯ টাকা করা হয়েছে। এতে পরিবহণ খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাজারের ওপর নজরদারি রাখলে পণ্যের দাম এই পর্যায়ে যেত না।

নিত্যপণ্য আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, এখন বাজারে যে আটা পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো বেশি দামে আগেই আমদানি করা হয়েছিল।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Advisory council set to hold emergency meeting this evening

The meeting will be held tonight at 8:00pm at the State Guest House, Jamuna

2h ago