পরিত্যক্ত জাহাজ আমদানি কমেছে, কাজ হারিয়েছেন ১০ হাজার শ্রমিক

চট্টগ্রামের একটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। ছবি: স্টার ফাইল ছবি

বাংলাদেশে ২০২২ সালে পরিত্যক্ত জাহাজ আমদানি ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণে পৌঁছেছে। ডলারের কারণে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে চলমান সংকটে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পরিত্যক্ত জাহাজের বাজার ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কেআর শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী তসলিম উদ্দিন বলেন, 'এই কারণে অনেক আমদানিকারক আগের তুলনায় কম জাহাজ আমদানি করেছে।'

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকারর্স অ্যান্ড রিসাইক্লারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে মোট ১৫১টি পরিত্যক্ত জাহাজ আমদানি করা হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ কম। একই সময়ে আমদানি করা পরিত্যক্ত জাহাজের মোট ওজন প্রায় ৫২ শতাংশ কমেছে।

চট্টগ্রামের ১৫৮টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৪৫টি বর্তমানে চালু আছে।

এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে জাহাজ ভাঙার দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ।

এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম বেলজিয়ামভিত্তিক সংস্থাগুলোর একটি বৈশ্বিক সংস্থা, যারা জাহাজ ভাঙার ফলে পরিবেশগত ক্ষতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করে।

গত ১ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৪৪৩টি সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ ও অফশোর ইউনিট ভাঙার জন্য বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্যে ২৯২টি বড় ট্যাঙ্কার, বাল্কার, ভাসমান প্ল্যাটফর্ম, কার্গো ও যাত্রীবাহী জাহাজ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এসেছে।

এতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রামে এসব জাহাজ ভাঙতে গিয়ে অন্তত ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৩৩ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাহাজ ভাঙতে গিয়ে ভারতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং পাকিস্তানে ৩ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় শিপ ব্রেকার ও রিসাইক্লাররা জানান, জাহাজের স্ক্র্যাপ মূলত স্টিল রি-রোলিং মিল এবং বার্জ প্রস্তুতকারী জাহাজ নির্মাতারা ব্যবহার করে।

বাংলাদেশে এই স্ক্র্যাপের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানি করা হয় এবং বাকিটা মেটানো হয় স্থানীয় শিল্প থেকে।

জিপিএইচ ইস্পাত বাংলাদেশের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন ফিলিপ বড়ুয়া বলেন, 'বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে স্ক্র্যাপের ঘাটতি বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। টাকার অবমূল্যায়নের মধ্যে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে এ বছর দেশের অনেক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড লোকসানের মুখে পড়েছে।'

বিএসবিআরএ এবং শিপ ব্রেকিং ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যৌথ তথ্য অনুসারে, ডলার সংকটে গত ১ বছরে প্রায় ৩০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে এবং এর ফলে ১০ হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।

চট্টগ্রামে ১৮৫টি তালিকাভুক্ত শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে। তবে এর মধ্যে প্রায় ৫০টি সবসময় চালু থাকে।

বিএসবিআরএ সভাপতি মো. আবু তাহের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিত্যক্ত জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় এর মধ্যে ৩০টি ইয়ার্ড বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ডলার সংকট শিপ ব্রেকিং শিল্পের দুর্দশার মূল কারণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমরা রাশিয়া বেল্ট থেকে পরিত্যক্ত জাহাজ আমদানি করতে পারছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'এ ছাড়া, ফ্রেইট চার্জ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পরিত্যক্ত জাহাজের সংখ্যা কমেছে। মালিকরা সহজে জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করছে না।'

জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, 'এই খাতের অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। ব্যবসায় মন্দার কথা বলে ইয়ার্ড মালিকরা অনেক কর্মচারীকে বেতন দেননি। এভাবে চলতে থাকলে সব শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

5h ago