ডলার সংকট, বাড়বে বিদ্যুৎ বিল ও লোডশেডিং

পিডিবি গ্রীষ্মকালীন ১৭,৮০০ মেগাওয়াট প্রাক্কলিত সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে দিনে ১৭,৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে
ছবি: সংগৃহীত

গরমের দিন, রোজার মাস এবং সেচ মৌসুমকে কেন্দ্র করে আগামী মাসগুলোতে চাহিদার পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে না, যার ফলে ঘন ঘন এবং বর্ধিত লোডশেডিংয়ের মুখে পড়তে পারে মানুষ।

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) গ্রীষ্মকালীন ১৭,৮০০ মেগাওয়াট প্রাক্কলিত সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে দিনে ১৭,৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তবে এই লক্ষ্য অর্জন নির্ভর করবে আমদানিকৃত গ্যাস, কয়লা ও তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের ওপর, যা সরকার ডলারের মজুদের ওপর চাপ তৈরি করবে বলে নিশ্চিত করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার, যা বড়জোর তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট।

এরইমধ্যে, ঢাকা এবং দেশের অন্যত্র অনেক এলাকা প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে, যখন চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ধারেকাছেও নেই।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পিডিবি ১১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি চাহিদার বিপরীতে সন্ধ্যার পিক আওয়ারে ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট থেকে ১০ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, যার অর্থ ঢাকা ও অন্যান্য এলাকার মানুষ বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।

জানুয়ারির শেষার্ধে যখন তাপমাত্রা আরও কম ছিল তখন থেকেই লোডশেডিং শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মার্চ মাস থেকে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশের কথা আছে।

যার অর্থ, যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখন  বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো উন্নতি না হলেও  বেশি বিল গুনতে হবে ব্যবহারকারীদের।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানির দাম সমন্বয় করার আগে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো যুক্তি নেই।

তিনি বলেন, যদি দাম বাড়ানো হয় তার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।

অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার যতই গতানুগতিক উপায়ে জ্বালানি ঘাটতি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে, ততই একটি দুষ্ট চক্রের মধ্যে আটকে যাবে।

'ডলার ঘাটতির মধ্যে সরকার জ্বালানি বিল পরিশোধের জন্য সাড়ে ৭ শতাংশ সুদে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। এ ধরনের স্বল্পমেয়াদি সমাধান দেশকে দীর্ঘ সময়ের জন্য গভীর সংকটে নিমজ্জিত করবে।'

সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার এই পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে জ্বালানি সরবরাহ সমস্যা সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

'আজ যদি ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট থাকত, তাহলে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ওই পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা কমাতে পারতো। তারা দীর্ঘদিন স্থানীয় গ্যাস সরবরাহও বাড়াতে পারেনি,' মোয়াজ্জেম যোগ করেন।

গরমের মাসগুলোতে চাহিদা মেটাতে পিডিবি এবার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওপরও নির্ভর করবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, দৈনিক প্রায় ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট আসবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।

পিডিবির সদস্য (জেনারেশন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, সম্প্রতি এক বৈঠকে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্চ থেকে তারা গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পারবেন।

তবে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন বিদ্যুৎ খাতে ওই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয়।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পিক সিজনে ৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর ভারত থেকে আমদানি করা হবে ২ হাজার ৩৪০ মেগাওয়াট।

গ্রীষ্মকালীন বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও চাহিদামতো অবদান রাখতে পারে না।

সরকার বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার বকেয়া বিলের প্রায় ৩৮ শতাংশ পরিশোধ করলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গেছে।

পিডিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার ব্যাংকগুলোকে বন্ড ইস্যু করে বিলগুলো পরবর্তীতে দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যাংকগুলোতে তারল্য এবং ডলার সংকট তো রয়েই গেছে।

বেশি দামের ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে তিনি বলেন, পিডিবির গ্রীষ্মকালীন পরিকল্পনায় এগুলোকে ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে।

গত বছর ১৬ হাজার ৯৬ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

11h ago