আমদানি শুল্ক কমালেও চিনির দাম বাড়ছেই

গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই পাইকারি বাজারে একটি গুদামে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিনি ভর্তি বস্তা আনলোড করছেন শ্রমিকরা। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

রমজানের আগে চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্ক রেকর্ড পরিমাণে প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারপরও পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এনবিআর প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর থেকে ৩ হাজার টাকা এবং প্রতি টন পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে ৬ হাজার টাকা শুল্ক প্রত্যাহার করে। এ ছাড়া, চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছে।

শুল্ক কমানোর পর আমদানি পর্যায়ে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির সামগ্রিক আমদানি ব্যয় যথাক্রমে প্রতি টনে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও ৯ হাজার টাকা কমে যাওয়ার কথা।

তারপরও চিনির দাম কমার লক্ষণ নেই। বরং পাইকারি বাজারে চিনির দাম প্রতি মণে বেড়েছে ১৩০ টাকা বা ৩ শতাংশ।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গত সোমবার প্রতি মণ চিনি (৩৭ দশমিক ৩২ কিলোগ্রাম) ৪ হাজার ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩ হাজার ৯৫০ টাকা।

ক্রমাগত সরবরাহের ঘাটতি ও রমজানে বহুল ব্যবহৃত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে চিনির দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

পাইকারি বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। খোলা চিনির দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।

গতকাল মঙ্গলবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, চিনির খুচরা মূল্য এক মাস আগের তুলনায় ২ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং এক বছর আগের তুলনায় ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে।

বাজারে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রতি কেজি খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম যথাক্রমে ১০৭ ও ১১২ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।

খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই পাইকারি বাজারের পাইকারি বিক্রেতা জিয়াউল হক বলেন, পাইকারি বাজারে চিনির চাহিদার মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ মেটাচ্ছেন ডিলাররা। সরবরাহ ঘাটতির কারণে এক সপ্তাহ ধরে চিনির দাম বাড়ছে।

তার মতে, দেরিতে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ায় চিনি পরিবহণের জন্য আসা ট্রাকগুলোকে মিল গেটে ২ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এর ফলে চিনির দামের সঙ্গে এই বাড়তি পরিবহন ব্যয়ও যোগ করা হচ্ছে।

বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চিনির দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম চিনি প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'চিনিতে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রভাব বাজারে পড়তে আরও সময় লাগবে। কারণ ইতোমধ্যে যেসব চিনি আমদানি করা হয়েছে এবং খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলো আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা পায়নি।'

তিনি বলেন, 'রমজানে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও এক মাস আগে এই সিদ্ধান্ত নিলে রমজানের আগেই সুফল পাওয়া যেত।'

রমজান শুরু হতে পারে আগামী ২৪ মার্চ থেকে।

বাজারে চিনি সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক উল্লেখ করে বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।'

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জানুয়ারিতে চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি শূন্য দশমিক ৪২ ডলার, যা ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৫ ডলার।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৩ দশমিক ২৮ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি এবং ১৩ হাজার ৯২৫ টন পরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে।

গত বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৪ দশমিক ৮৮ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি এবং ৮ হাজার ৭৭০ টন পরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়েছিল বলে এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

1h ago