বিদেশি সহায়তার অর্থ ব্যবহার ত্বরান্বিত করবে সরকার

সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উন্নয়ন সহযোগীর মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বিদেশি সহায়তা পাইপলাইনে চলে আসে।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে পাইপলাইনে থাকা বিদেশি সহায়তা প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের রিজার্ভ বাড়াতে এই অর্থ ব্যবহারের উদ্যোগ নেবে।

সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উন্নয়ন সহযোগীর মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বিদেশি সহায়তা পাইপলাইনে চলে আসে।

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ইতোমধ্যে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে প্রকল্পগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে উদ্যোগ নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা যায়।

ওই বৈঠক শেষে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে তার অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে, উন্নয়ন সহযোগীরা ইতোমধ্যে যে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।

তিনি বলেন, 'এসব অর্থ ছাড় করাতে পারলে রিজার্ভ নিয়ে বিদ্যমান সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হতে পারে।'

ইআরডির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত পাইপলাইনে ৪৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছিল।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি অর্থায়নের একটি প্রকল্প শেষ করতে গড়ে প্রায় পাঁচ বছর সময় লাগে। তাই প্রতি অর্থবছরে পাইপলাইনে থাকা বিদেশি অর্থের ২০ শতাংশ ব্যবহার হলে তাকে সন্তোষজনক বলে মনে করা হয়।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তার অর্থ ব্যবহার করেছে, যা পাইপলাইনে থাকা অর্থের প্রায় ২১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

আগের অর্থবছরে যা ছিল ২২ দশমিক ১১ শতাংশ।

ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেট সহায়তার বড় অংশ আসায় গত তিন অর্থবছরে বাংলাদেশে বিদেশি অর্থের ব্যবহার বেড়েছে।

যদিও অতীত বলছে, পাইপলাইনে থাকা বিদেশি সহায়তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রেকর্ড সন্তোষজনক নয়। এটি ১৪ থেকে ১৫ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে।

গত চার-পাঁচ বছরে বাংলাদেশ রাশিয়া, চীন ও ভারত থেকে বড় ধরনের ঋণ নিয়েছে। এসব উৎস থেকে পাইপলাইনে আছে ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৮ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা হয়েছে, তাই পাইপলাইনে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে।

তবে, রাশিয়া বিদেশি প্রকল্পের জন্য ঋণ দেওয়ার সময় অর্থ বিতরণ করে না। এর পরিবর্তে, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করে। কিন্তু যে ব্যয় হয় তা পরে ঋণের পরিমাণ হিসেবে গণনা করা হয়।

তাই এই প্রকল্পে অর্থের ব্যবহার বাড়লেও তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে কোনো অবদান রাখেনি।

চীন বাংলাদেশকে ১২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এর মধ্যে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৮ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং পাইপলাইনে ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার আছে।

এছাড়া ২০০৯ সালের পর ভারত তিনটি বিশেষ চুক্তির আওতায় ৭ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ২ দশমিক ১৮ ডলার ডলার ব্যবহার করেছে, পাইপলাইনে থেকে গেছে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপান পাইপলাইনে থাকা বেশিরভাগ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এসব উৎস থেকে পাইপলাইনে আছে ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা পাইপলাইন থেকে কমপক্ষে তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলার ছাড়ে দ্রুত উদ্যোগ নেবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিদেশি অর্থায়নের কিছু ধীরগতির প্রকল্প রয়েছে, যেখানে সব অর্থ ব্যবহার নাও হতে পারে। এই জাতীয় প্রকল্পগুলোর অর্থ অন্যান্য প্রকল্পে সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি উভয় সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

Comments