পাটের জাগ নিয়ে বিপাকে ফরিদপুর-রাজবাড়ীর চাষিরা

বর্ষাকাল, পাট, বৃষ্টিপাত, ফরিদপুর, রাজবাড়ী,
ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

প্রকৃতিতে বর্ষাকাল চললেও এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর পাট চাষিরা। দেশের এ দুটি জেলায় মার্চের শুরু থেকে মে'র প্রথম পর্যন্ত পাট বীজ রোপণ করা হয়। তারপর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাট কাটা হয়।

পাট গাছ থেকে আঁশ ছাড়ানোর জন্য গাছগুলোকে প্রায় ৮-১৪ দিন স্থির বা ধীর গতির পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। তারপর গাছ পচে গেলে পাটকাঠি থেকে আঁশ আলাদা করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াকে জাগ দেওয়া বলে।

কিন্তু, গত দুই বছর ধরে ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে বৃষ্ঠিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ছোট ছোট জলাশয়ের সংখ্যা কমে গেছে।

ফরিদপুরের সদরপুর, নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা এবং রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে অনেকে জমির পাট কাটতে পারছেন না। যারা কেটেছেন তারাও জায়গার অভাবে পাট জমিতে ফেলে রেখেছেন। পানি না থাকায় অনেকে বাড়ির পাশের ছোট খাদে পাম্পের সাহায্যে পানি উঠিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।

পাট চাষিদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পাট কেটে জাগ দেওয়ার স্থান পর্যন্ত নিয়ে যেতে প্রতিদিন একজন শ্রমিকে ৭০০-৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০০-৩০০ টাকা বেশি।

ফদিরপুরের সালথা উপজেলার সেনাটি গ্রামের পাটচাষী হাফিজুর ফকির বলেন, 'আমি ৩ বিঘা জমিতে বীজ, সার ও কীটনাশক ক্রয় এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ ৭৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। কিন্তু, পানির অভাবে অভাবে আমি এখন পর্যন্ত ১ বিঘা জমির পাট কাটতে পারিনি।'

একই এলাকার আরেক সাহেব শেখ বলেন, 'বৃষ্টির অভাবে আমার পাট গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়নি। আর এখন পানির অভাবে ৫ বিঘা খেতের মধ্যে মাত্র ২ বিঘার পাট কাটতে পেরেছি।'

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী উপজেলার ইন্দুরদী গ্রামের বাসিন্ধা মো. সেলিম শেখ জানান, তার ৩ বিঘা জামির পাট জাগ দেওয়ার জায়গায় নিতে শ্রমিদের ৮ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু, ঠিকমত বৃষ্টিপাত হলে তিনি নিজের জমিতে পাট জাগ দিতে পারতেন।

নগরকান্দা উপজেলার বাস্তুপুটি গ্রামের কৃষক প্রমথ চন্দ্র মন্ডল বলেন, 'অন্যান্য বছর জুনের শেষে আমাদের জমিতে পানি থাকত। কিন্তু, ২ বছর ধরে পানির সংকট থাকায় পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তাছাড়া, সঠিকভাবে জাগ দিতে না পারলে মানসম্পন্ন আঁশ পাওয়া সম্ভব হবে না।'

ফরিদপুর সদর উপজেলার অন্যতম বড় পাটবাজার কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী আরিফুরজামান চান বলেন, 'পানির অভাবে কৃষকদের বারবার একই জলাশয় ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে, রঙ ও গুণমান নষ্ট হচ্ছে এবং কৃষকরা প্রতি মণ (প্রায় ৩৭ কেজি) পাট থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কম পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।'

ফরিদপুরের পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা জেলার ৭২ জন পাট চাষিকে খাদ তৈরি করতে সাহায্য করছি। যেন তারা পাট জাগ দিতে পারে, যদিও এটি যথেষ্ট নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা পাট চাষিদের 'রিবোন রোটিৎ' পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলেছি। কিন্তু, এই পদ্ধতিতে পাট থেকে আঁশ আলাদা করতে গেলে পাটকাঠি নষ্ট হয়ে যায়। তাই, কেউ এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাই না। এ ছাড়াও, আমরা স্লুইসগেট খুলতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ফরিদপুরে প্রায় ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮০ বেল (এক বেল সমান ১৮০ কেজি) পাট উৎপাদিত হয়েছে এবং রাজবাড়ীতে  হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ১৩৫ বেল। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সারা দেশে প্রায় ৭৭,২৫,০৮৩ বেল পাট উৎপাদিত হয়েছিল।

ফরিদপুর ও রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ফরিদপুর থেকে ১২,২২,২৮০ বেল ও রাজবাড়ী থেকে ৬,৮১,২৫০ বেল পাট উৎপাদনের আশা কারা হচ্ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে (ফরিদপুর ও রাজবাড়ী এই বিভাগের মধ্যে) জুনে ৩২৬ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে বিগত বছরগুলোতে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩৬১ মিমি। জুলাইয়ে এই বিভাগে গড় বৃষ্ঠিপাত আশা করা হচ্ছে ৩৭৬ মিমি।

Comments

The Daily Star  | English
Tarique Rahman on interim government

Interim govt must not be allowed to fail: Tarique addresses BNP rally

Thousands join BNP rally from Nayapaltan to Manik Mia Avenue

4h ago