‘জাপানের চায়না প্লাস ওয়ান নীতিতে লাভবান হবে বাংলাদেশ’

ইয়াসুতোশি নিশিমুরা, কাজুশিগে নোবুতানি, জেট্রো, জাপান,
জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) প্রেসিডেন্ট কাজুশিগে নোবুতানি

জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরার সঙ্গে জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) প্রেসিডেন্ট কাজুশিগে নোবুতানি বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের এই সফরের লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) নিয়ে আলোচনা করা। বাংলাদেশ ও জাপান বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা করেছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া ই-মেইল সাক্ষাৎকারে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন কাজুশিগে নোবুতানি

ডেইলি স্টার: অনেক জাপানি প্রতিষ্ঠান চীন থেকে তাদের কারখানা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে সরিয়ে নিতে চায়। আপনি কি মনে করেন, জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করার সুযোগ বাংলাদেশের আছে?

নোবুতানি: জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু চীন নয়, আসিয়ান দেশগুলো থেকেও কারখানা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য নির্ধারিত দেশগুলো মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

নোবুতানি: বাংলাদেশে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা করার অনেক সুযোগ আছে।

প্রথমত, আমরা দেখছি বাংলাদেশের মানবসম্পদ ব্যবহার করে সেখানে অনেক রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে উঠেছে।

১৯৮০-এর দশক থেকে কিছু জাপানি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপন করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান এখনো বাংলাদেশে খুব ভালো ব্যবসা করছে।

দ্বিতীয়ত, জাইকার সহায়তায় বাংলাদেশে বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চলমান আছে। যেহেতু বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, তাই জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশের একটি বিশাল নিজস্ব বাজার আছে। বাংলাদেশে তাদের পণ্য বাজারজাত করতে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো জেট্রোর ঢাকা কার্যালয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে চাচ্ছে। আমরা এ দেশে ব্যবসার অনেক সুযোগ দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আইসিটি ও স্টার্টআপখাত বেশি আকর্ষণীয়।

ডেইলি স্টার: আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারবে?

নোবুতানি: ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে কঠোর শ্রম দেওয়ায় আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করি।

বাংলাদেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ আরও জোরদার করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সাধারণত বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নানা মত পাই। এই বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর কাছে তুলে ধরি। এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্য জাপান থেকে আরও বিনিয়োগ আনবে। এজন্য আমরা এখানকার জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

ডেইলি স্টার: জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

নোবুতানি: জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সর্বদা ব্যবসার পরিবেশ ও প্রণোদনার বিষয়গুলো দেখে। জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ ও প্রণোদনা থাকতে হবে।

এশিয়ার দেশগুলোয় জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে আরও ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়তে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের সুযোগ আছে?

নোবুতানি: জাপানে জনসংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি এটি একটি প্রবীণ মানুষের দেশে পরিণত হচ্ছে। ২ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উৎস খুঁজে পেতে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের একযোগে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।

বাংলাদেশ জাপানের পরীক্ষিত বন্ধু। আমরা বিশ্বাস করি যে, ব্যবসার ক্ষেত্রে সবার জন্য সুবিধাজনক সম্পর্ক উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করতে পারি।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশকে জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্টের জন্য জেট্রো কীভাবে সহায়তা করতে পারে?

নোবুতানি: জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টিতে জেট্রো বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। জাপানি বিনিয়োগ বাড়াতে আমাদের কোনো সহজপথ নেই। আমি বিশ্বাস করি, সংক্ষিপ্ততম উপায় হলো—জাপান থেকে আরও ব্যবসা পেতে একের পর এক বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে হবে।

ডেইলি স্টার: আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাবনাময় খাতগুলো কী কী হতে পারে?

নোবুতানি: জাপানিদের বিনিয়োগের জন্য স্টার্টআপ একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ শিল্প বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান। আমরা বিশ্বাস করি, জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করতে পারে।

কার্বন-নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য জ্বালানি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। তাই বাংলাদেশের জন্য পরিবেশবান্ধব জ্বালানি চালু করা জরুরি।

ডেইলি স্টার: আপনি কি মনে করেন জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন?

নোবুতানি: বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। আমরা শুল্ক পদ্ধতি ও কর প্রশাসনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখতে পাই।

আমরা কর প্রশাসনে আরও স্বচ্ছতা চাই। আমি বিশ্বাস করি যে, ডিজিটালাইজেশন ও ওয়ান স্টপ পরিষেবা আরও ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরোবিশ্ব অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে পড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

যেহেতু বাংলাদেশকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়, তাই জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা পরিচালনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করবো, এসব সমস্যা কেটে গেলে বাংলাদেশ সরকার বৈদেশিক মুদ্রানীতিতে আরও ভালো নিয়মকানুন যোগ করবে।

জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের শিল্প বহুমুখীকরণে অবদান রাখতে চায়। তবে বাইরে থেকে বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে শিল্প বহুমুখীকরণ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

এসব নীতির স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে শিল্প উন্নয়নের কৌশলগুলো শিখতে পারে।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশ কীভাবে জাপানে রপ্তানি বাড়াতে পারে?

নোবুতানি: বাংলাদেশের উচিত রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকখাতে মূল্য সংযোজন পণ্যের পরিমাণ বাড়ানো। জাপান ও বাংলাদেশ সরকার গত ডিসেম্বরে দ্বিপাক্ষিক ইপিএর জন্য যৌথ নিরীক্ষা দল গঠন করেছে।

ইপিএ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) তুলনায় বেশি বিস্তৃত। আমাদের জরিপ অনুসারে, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উত্তরণ হওয়ার আগে বাংলাদেশে ৮৫ শতাংশ জাপানি প্রতিষ্ঠান এফটিএ বা ইপিএ করতে চায়।

আমরা আরও জানতে পেরেছি—এফটিএ বা ইপিএ ছাড়া বাংলাদেশে থাকা ২০ শতাংশ জাপানি প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে কারখানা সরিয়ে নেওয়া বা বাংলাদেশ থেকে পণ্য কম কেনার বিষয়টি বিবেচনা করবে। আমি বিশ্বাস করি, ইপিএ শুধু কারখানা স্থানান্তর বন্ধই নয়, জাপানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতেও সহায়তা করবে।

ডেইলি স্টার: গত এপ্রিলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ভারত সফরের সময় বঙ্গোপসাগর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য নতুন শিল্পকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে?

নোবুতানি: জাপান সরকার 'মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয়' অঞ্চল বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সহায়তা করছে জাপান। এটি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের প্রবেশদ্বার হবে। দিন শেষে, মাতারবাড়ী অন্যান্য অঞ্চলেও রপ্তানির কেন্দ্রভূমি হতে পারে। আক্ষরিক অর্থে, মাতারবাড়ী এই অঞ্চলে গেম-চেঞ্জার হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Gaza rescuers say Israeli forces kill 60, half near aid centres

Civil defence spokesman Mahmud Bassal told AFP that five people were killed while waiting for aid in the southern Gaza Strip and 26 others near a central area known as the Netzarim corridor, an Israeli-controlled strip of land that bisects the Palestinian territory

11m ago