দুর্গাপূজায় এবার প্রত্যাশার চেয়ে বিক্রি বেশি

পূজার কেনাকাটা
রাজধানীর ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে পূজার কেনাকাটা। ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভালো বিক্রি হওয়ায় ঢাকার শপিং সেন্টার, ফ্যাশন হাউস ও অন্যান্য খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রগুলোয় বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ভিসা না পাওয়ায় অনেকে কেনাকাটা করতে প্রতিবেশী ভারতের অন্যতম প্রধান শহর কলকাতায় যেতে পারেননি।

দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে বেশিরভাগ ফ্যাশন ব্র্যান্ড, পোশাক খুচরা বিক্রেতা ও ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডগুলো নতুন পণ্য নিয়ে আসার পাশাপাশি মূল্য ছাড়সহ নানান অফার দিয়েছে।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা দাস দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত দুই সপ্তাহে পরিবারের জন্য কেনাকাটায় ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

তিনি তার বাবা, স্বামী ও ভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক প্রয়োজন কেনাকাটা সেরেছেন। এ ছাড়াও, তার মা ও অন্যান্য আত্মীয়দের জন্য শাড়ি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনা হয়েছে।

কৃতজ্ঞতা জানাতে তিনি তার ছেলের চিকিৎসকের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছেন। 'এটা খুবই আনন্দের। তিনি শুধু একজন ডাক্তার নন; তিনি আমার পরিবারের সদস্য হয়ে গেছেন।'

রাজধানীর বেসরকারি চাকরিজীবী সৈকত সরকার ডেইলি স্টারকে জানান, মা, স্ত্রী ও দুই বোনের জন্য আটটি শাড়ি কেনা হয়েছে। নিজের জন্য কিনেছেন শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট ও জুতা।

তিনি বলেন, 'এই পূজা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। উপহার দেওয়ার মধ্যে আনন্দ আছে।'

দেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরুর প্রায় ১০ দিন আগে বিক্রি বেড়ে যায়। এটি শুরুর পর কমপক্ষে আরও তিন দিন বিক্রি অব্যাহত থাকে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হিন্দু ধর্মাম্বলী।

ফ্যাশন ওয়্যার, অ্যাকসেসরিজ, হোম টেক্সটাইল, হস্তশিল্প ও তাঁতভিত্তিক পণ্যের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান 'কে ক্রাফট'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা খালিদ মাহমুদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমে ক্রেতা বেশি।'

তার দৃষ্টিতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও এ বছর বিক্রি গত বছরের তুলনায় ভালো।

খালিদ মাহমুদ খান আরও বলেন, 'বেশ কয়েকটি পণ্যে ক্রেতাদের মূল্য ছাড়ের অফার দেওয়া হয়েছিল। এটি ভালো সাড়া ফেলেছে।'

ফ্যাশন হাউজ রং বাংলাদেশের ম্যানেজার সৌমিক দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত মৌসুমের তুলনায় এবার বিক্রি ভালো হয়েছে।'

তিনি আশা করছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি ১০ শতাংশের বেশি বাড়বে।

সৌমিক দাস মনে করেন, ভিসা না পাওয়ায় অনেকেই কলকাতা গিয়ে কেনাকাটা করতে পারেননি। এটি দেশে বিক্রি বেড়ে যাওয়া একটি কারণ।

ব্যবসায়ীদের হিসাবে, বাংলাদেশে উৎসব উপলক্ষে মোট বিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশ হয় দুই ঈদে এবং বাকিটা হয় পহেলা বৈশাখ ও দুর্গাপূজায়।

ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে জানান, পূজার সময় শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের বেশি চাহিদা থাকে। ক্রেতারা কাতান, সিল্ক ও নকশাদার শাড়ির প্রতি বেশি আগ্রহী। জামদানির চাহিদাও অনেক।

এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার ও ই-কমার্স লিড রায়হান কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত সপ্তাহ থেকে ক্রেতারা পূজাকে কেন্দ্র করে পণ্য কিনতে শুরু করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি ভালো হয়েছে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই প্রতিষ্ঠানের অপর কর্মকর্তা জানান, গত বছরের তুলনায় এবারের পূজাকে সামনে রেখে তাদের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

যেকোনো উৎসবকে ঘিরে বাংলাদেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিক্রিও স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এবার ব্লেন্ডার, গ্রিন্ডার, এগ-বিটার, রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন ও ফ্রিজের মতো পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে।

ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নুরুল আফসার ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছরও একই দৃশ্য দেখা গেছে।

তিনি বলেন, 'এ বছর দুর্গাপূজা ও ক্রিকেট বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমাদের কংকা এলইডি টিভি ও ফ্রিজের বিক্রি তুলনামূলকভাবে ১০-১৫ শতাংশ বেড়েছে।'

উৎসবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মিষ্টি।

ওয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শাহ মোস্তাক আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদ ও পহেলা বৈশাখের পর দুর্গাপূজাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।'

তিনি বলেন, 'দুর্গাপূজায় অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মিষ্টি বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।'

পূজা উপলক্ষে গত ১৫ অক্টোবর থেকে কয়েক ধরনের মিষ্টিতে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

শাহ মোস্তাক আহমেদ বলেন, গতকাল শুক্রবার থেকে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ায় এখন বিক্রি বাড়তে শুরু করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Scorched at work: Global report revealed dire heat risks for workers

A joint report released by the World Health Organisation (WHO) and the World Meteorological Organisation (WMO) exposed the growing dangers of extreme heat on workers’ health and productivity worldwide.

34m ago