বেকারত্বের হার কমা নিয়ে প্রশ্ন অর্থনীতিবিদদের

স্টার ফাইল ছবি

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়েছে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা কমেছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কমেছে।

এমন এক সময়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে এই তথ্য উঠে এলো যখন দেশের অর্থনীতি চাপে আছে। বিশেষ করে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো মন্থর হয়ে গেছে। তাই এই সময়ে বেকারের সংখ্যা কমার তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৩০ হাজার, যা গত বছরের একই সময়ের ২৬ লাখ ১০ হাজার চেয়ে কম। তবে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'অর্থনীতির প্রতিটি সূচক যখন ধীর গতিতে চলছে, তখন কীভাবে কর্মসংস্থান বেড়েছে তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। অন্যান্য সূচকের পাশাপাশি শিল্প আমদানি প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য কমেছে, অথচ এই খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।'

তিনি আরও বলেন, '২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স ও ঋণ প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো চাপে পড়েছে। সুতরাং, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির তথ্যটি বিভ্রান্তি (পাজলিং) তৈরি করেছে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার ১৮ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি ২৫ শতাংশ কমেছে। এটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমার আভাস।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে মোট শ্রমশক্তি দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৯ লাখ বেশি।

তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতে কর্মশক্তি ১০ লাখ কমলেও সেবা খাতে বেড়েছে ১৪ লাখ ৮ হাজার এবং শিল্প খাতে বেড়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার

অর্থনীতিবিদ ও জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম অফিসের কর্মসংস্থান খাতের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম শিল্প খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তবে তিনি বলেন, '২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে শিল্প কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি এখনো কম। যেহেতু উৎপাদন ক্ষেত্রে এটি ঘটেছে, তাই ভালো বলা যায়।'

২০২২ এবং ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা ও বেকারত্বের হার উভয়ই কমেছে।

রিজওয়ানুল ইসলাম মন্তব্য করেন, এখানে বেকারত্বের যে সংজ্ঞা ও পরিমাপ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের প্রকৃত অবস্থা ফুটে ওঠে না।

তিনি বলেন, 'বেকারত্বের সংখ্যা কমার যে তথ্য জানানো হয়েছে তা যদি শ্রমবাজারের বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন হয়, তাহলে তা একটি ভালো খবর হবে। কিন্তু, সাধারণত বাংলাদেশের মতো দেশে এমনটা হয় না।'

তিনি আরও বলেন, 'বেকার নারীর সংখ্যা কমেনি এবং নারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার কিছুটা বেড়েছে।'

নারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা আগের বছরের ৩ দশমিক ২৪ শতাংশের চেয়ে বেশি।

তিনি জানান, নারীর ক্ষেত্রে শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার কমেছে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে বেড়েছে। এর কারণ তদন্ত ও যথাযথ নীতি গ্রহণ করা দরকার।

'অনেকদিন ধরেই এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গবেষণা ও নীতি নির্ধারণ উভয় ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি গুরুত্ব-সহকারে দেখা গুরুত্বপূর্ণ,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

4h ago