অবরোধে ভাড়াচালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিকশাচালকের আয় কমেছে
ঢাকার পল্লবীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত কোনো যাত্রী পাননি।
বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী পঞ্চম ধাপের অবরোধের প্রথম দিনের সকালে অলস সময় কাটিয়ে হতাশ আলাউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি প্রায় আড়াই ঘণ্টা একই জায়গায় আছি। কিন্তু, কোনো যাত্রী পেলাম না।'
স্বাভাবিক দিনে এ সময়ের মধ্যে তিনি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করতেন বলে জানান।
আলাউদ্দিন আরও বলেন, 'অবরোধ চলাকালে আগুন দেওয়ার আশঙ্কায় অনেকে বাইরে বের হন না। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।'
গত ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অবরোধের কারণে রাজধানীতে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকসহ পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অবরোধের কারণে আয় কমে যাওয়ায় এসব বাহনের চালকরা বেঁচে থাকার লড়াই করছেন।
আলাউদ্দিন আরও বলেন, 'অবরোধ আমার জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। যাত্রীর অভাবে আমার আয় অনেক কমে গেছে।'
'মালিককে প্রতিদিনের জমা দেওয়ার পর পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। দিন দিন সমস্যা বাড়ছে। জানি না কতদিন তা সহ্য করতে পারব।'
অবরোধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক গাড়িতে আগুন দেওয়ায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মিরপুর ১২, মিরপুর ১০, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, কলাবাগান ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় স্বাভাবিক দিনের তুলনায় যানবাহন কম।
ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকরা ডেইলি স্টারকে জানান, তীব্র যানজট থাকলে তাদের অনেক চাহিদা বেড়ে যায়। তবে অবরোধে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কমে গেলেও তাদের চাহিদা কম থাকে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা ডেইলি স্টারকে জানান, অফিসগামী যাত্রীরা এখন মেট্রোরেল ব্যবহার করায় তাদের চাহিদা অনেক কমে গেছে।
অবরোধের কারণে তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলেও জানান তারা।
'সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে বাংলামোটর মোড়ে মাত্র দুইজন এসেছিলেন,' উল্লেখ করে গতকাল ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক দিদার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলামোটর মোড় থেকে মহাখালী বাস টার্মিনালে যেতে এক যাত্রীর কাছ থেকে সাধারণত ২০০ টাকার বেশি ভাড়া নিই। কিন্তু অবরোধের এই সময় একজন ১৫০ টাকা দিতে চাওয়ায় আমি যাইনি।'
তিনি স্বাভাবিক সময়ে সাধারণত দিনে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা আয় করলেও অবরোধের সময় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার বেশি আয় করতে পারছেন না।
অবরোধের সময় সন্ধ্যার পর সাধারণত যাত্রী থাকে না বলেও জানান তিনি।
অপর চালক রিমন হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গাবতলীতে অপেক্ষা করেও তিনি কোনো যাত্রী পাননি।
রিমন বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে রাস্তার পাশে ১৫ থেকে ২০ মিনিট দাঁড়ালেই যাত্রী পাওয়া যায়। অবরোধের সময় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করা আমার জন্য খুব কঠিন। স্বাভাবিক দিনে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা আয় করি।'
মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে রিকশাচালক খোরশেদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদা কম থাকায় দৈনিক আয় অনেক কমে গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আয় হয়েছে মাত্র ২০০ টাকা। স্বাভাবিক দিনে এই সময়ের মধ্যে ৩০০ টাকার বেশি আয় করতাম।'
'পরিবার নিয়ে মিরপুরে বস্তিতে ভাড়া থাকি। এ ছাড়াও, প্রতিদিন গ্যারেজ ভাড়া দিই ২৫০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল।'
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে খোরশেদ আলম আরও বলেন, 'রোজগার কমে যাওয়ায় এই মাসটি খুব কঠিন হয়েছে। জানি না এভাবে কতদিন চলবে। আমরা বাঁচব কীভাবে।'
Comments