সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আসছেন আরও ৪ লাখ মানুষ

স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা চার লাখেরও বেশি বাড়াতে যাচ্ছে।

গত সপ্তাহে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নতুন সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ প্রকল্পের ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকছে।

এদিকে অর্থের অপব্যবহার ও দুর্নীতি কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সব কার্যক্রমকে নতুন কাঠামোর আওতায় আনতে চলতি মাসের শুরুতে দুটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সরকার দুটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্ক, বিধবা, পরিত্যক্তা বা দুঃস্থ নারী হিসেবে ভাতা পাওয়া সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়াবে।

তিনি আরও বলেন, তহবিল সীমাবদ্ধতার কারণে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো যায়নি।

জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ালে তা দরিদ্রদের স্বস্তি দেবে। দেশে গত ১৩ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার নয় শতাংশের বেশি।

চলতি অর্থবছরে ৫৮ লাখ এক হাজার প্রবীণ প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে পাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ সালে তাদের সংখ্যা দুই লাখ বাড়বে।

সরকার চলতি অর্থবছরে 'বয়স্ক ভাতা' কর্মসূচিতে চার হাজার ২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বার্ষিক গড় আয় ১০ হাজার টাকার কম এমন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ও ৬২ বছরের বেশি বয়সী নারীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

দেশের ২৬২ উপজেলায় সব যোগ্য প্রবীণ নাগরিক এ সুবিধা পাচ্ছেন। উপকারভোগীর সংখ্যা আট লাখ বাড়ানো হলে বাকি ২৩৩ উপজেলায় সব যোগ্য ব্যক্তিকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, পর্যায়ক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

চলতি অর্থবছরে বিধবা, পরিত্যক্ত বা দুস্থ নারীদের জন্য এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রায় ২৫ লাখ ৭৫ হাজার নারী এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। এই সুবিধা আরও দুই লাখ মানুষ পাবেন।

এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সী নারী যাদের বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকার নিচে তারা প্রতি মাসে ৫৫০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।

তবে আরও কিছু প্রকল্পে ভাতা বাড়ানো হয়েছে।

মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও, ৮০ বছর বা এর বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকরা আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে প্রতি মাসে ৯০০ টাকা হারে ভাতা পাবেন। এটি বর্তমানে ৬০০ টাকা।

ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার উপকারভোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি।

বর্তমানে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন।

সরকার ১০ মূল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় এক কোটি ৩৯ লাখ উপকারভোগীর জন্য ৪৩ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এর মধ্যে আট লাখ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী পাবেন ২৭ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।

জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভাতা

চলতি মাসের শুরুতে দেওয়া পরিপত্রে মন্ত্রণালয় জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব টাকা উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিতে হবে। ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে অনেক কর্মসূচির ভাতা এমএফএসের মাধ্যমে দেওয়া হলেও অনেক সময় উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা হয় না। তাই টাকার অপব্যবহারও হয়।

কোনো উপকারভোগীর আঙুলের ছাপ নেওয়া না গেলে বা তার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে এ নিয়ম শিথিল করা হতে পারে।

নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি সম্পর্কিত বিস্তৃত প্রতিবেদন

অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে। কারা সুবিধাভোগী ও কোন অঞ্চল সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে—এর পরিষ্কার চিত্র পেতে এ বছর নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সরকার প্রায় ১৩০টি কর্মসূচির আওতায় নিরাপত্তা বেষ্টনী সুবিধা দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জন্য মোট বরাদ্দ এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা।

কিছু কর্মসূচি সত্যিই দরিদ্রদের উপকারে আসছে কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের সন্দেহ আছে। টাকা বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তারা বলছেন, বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে বলেছে যে, এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও কারা ভাতা পাচ্ছেন তা নিয়ে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সুপারিশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করবে।

Comments

The Daily Star  | English
Fakhrul warns of new conspiracies in Bangladesh

Stay alert against conspiracies: Fakhrul

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today urged all to stay alert, warning that conspiracies are underway to once again plunge Bangladesh into new dangers

3h ago