ব্যতিক্রমী সরকারি প্রকল্প, প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে কম খরচে বাস্তবায়ন

তবে ব্যতিক্রম একটি প্রকল্পের সন্ধান পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এই প্রকল্পটিকে ব্যতিক্রম বলা হচ্ছে, কারণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় প্রাক্কলন ব্যয়ের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কম ব্যয় হয়েছে।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, আইএমইডি, সরকারি প্রকল্প, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর,
বাংলাদেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর। চট্টগ্রামে প্রায় ৩৩ হাজার ৮০০ একর জমির ওপর নির্মিত বিএসএমএসএন ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্টার ফাইল ফটো

সরকারি প্রকল্প নিয়ে খুব পরিচিত একটি অভিযোগ হলো, সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, সরকারি প্রকল্পের কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয় এবং অপ্রয়োজনীয় কিছু ব্যয় করা হয়

তবে ব্যতিক্রম একটি প্রকল্পের সন্ধান পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এই প্রকল্পটিকে ব্যতিক্রম বলা হচ্ছে, কারণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় প্রাক্কলন ব্যয়ের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কম ব্যয় হয়েছে।

আইএমইডির এক মূল্যায়ন অনুযায়ী, ব্যতিক্রমী এই প্রকল্পটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ ও বিতরণ প্রকল্প।

আইএমইডির মূল্যায়নে বলা হয়, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ২০১৭ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের জুন এই সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এজন্য তারা ব্যয় করেছে ৩০৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অথচ প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল বা প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৪০৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির জন্য ৩৬৭ কোটি ১০ লাখ টাকা অনুমোদনের পর 'রিভার ক্রসিং বাই হরাইজন্টাল ডাইরেকশনাল ড্রিলিং ইত্যাদি' সংশোধনের মাধ্যমে এই ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা করা হয়।

আইএমইডি জানিয়েছে, নানা কারণে প্রকল্পের কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি ব্যয় হয়নি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বল্প ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।

মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ভালভ স্টেশনের জন্য বিনামূল্যে জমি দিয়েছে।

এছাড়া, আগে অধিগ্রহণ করা বেজার জমি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ২০ ফুট প্রশস্ত পাইপলাইন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ অর্থ জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো অর্থের প্রয়োজন হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, 'পাশাপাশি নদী পারাপার ও ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) সম্পর্কিত হরাইজন্টাল ডিরেকশনাল ড্রিলিং পদ্ধতির আওতায় ক্যাথোডিক প্রোটেকশন সিস্টেম স্থাপনের কাজ প্রাক্কলিত কাজের চেয়ে কম ছিল।'

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যয় কম হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হলো পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি।

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় মিরসরাই শিল্পাঞ্চল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর পর্যন্ত গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় গ্যাস সরবরাহের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ওই এলাকার তিন শিল্প গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমইডি।

তারা বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা যেমন গ্যাস সংযোগের আওতায় আসবে, তেমনি প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব বাড়বে।

যাইহোক আইএমইডি বলেছে, প্রকল্পের বিভিন্ন প্রকিউরমেন্ট প্যাকেজের আনুমানিক খরচ বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, কারণ ঠিকাদার দরপত্রে আনুমানিক খরচের চেয়ে বেশি দর উল্লেখ করেছিল।

ফলে বারবার দরপত্র ডাকতে হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমইডি।

এতে বলা হয়েছে, এছাড়াও প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি, তাই প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের প্রাক্কলন ব্যয় ও কাজের পরিধি যথাযথ ছিল না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের রাজস্ব সাশ্রয় করতে পেরেছে, এটি একটি ভালো উদাহরণ। কারণ বেজা জমির জন্য কোনো টাকা নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, 'সাশ্রয় করা অর্থ অন্যান্য প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যা অর্থনৈতিক সংকটের সময় গুরুত্বপূর্ণ।'

'তবে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতার কারণে অর্থ সাশ্রয় হয়নি, বরং বেজার উদারতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে,' মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি মনে করেন, বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এ ধরনের সুযোগ ছিল। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে সেসব প্রকল্পের অর্থ সাশ্রয় করতে পারত।

(প্রতিবেদনটি বাংলা থেকে অনুবাদ করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English

77.78% students pass HSC, equivalent exams

A total of 77.78 percent students passed this year’s Higher secondary Certificate (HSC) and equivalent examinations

48m ago