শাবানা-ববিতা আপার সিনেমা দেখে স্বপ্ন দেখতাম নায়িকা হব: রোজিনা

রোজিনা। ছবি: সংগৃহীত

নায়িকা রোজিনা এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন। অসংখ্য সামাজিক ও রোমান্টিক সিনেমা করে তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। ভারতীয় তারকা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতেও তিনি অভিনয় করেছেন। তা ছাড়া এদেশের বিখ্যাত বেশিরভাগ পরিচালকের সিনেমা তিনি করেছেন। দুবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তির ঘোষণা হওয়ার পর রোজিনা  কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

চলচ্চিত্র শিল্পের সবচেয়ে বড় সম্মান, বড় পুরস্কার আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন। কেমন লাগছে?

রোজিনা: এরচেয়ে বড় সম্মান আর নেই, এরচেয়ে আনন্দের কিছু নেই। অনেক  বড় স্বীকৃতি এটা। সিনেমায় আসার সার্থকতা এটা। আনন্দটা অন্যরকম। আমি কৃতজ্ঞ  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, কৃতজ্ঞ জুরিবোর্ডের কাছে। সিনেমা শিল্পের সবার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সাংবাদিকদের প্রতি ভালোবাসা। আমার দর্শকদের কাছেও চিরকৃতজ্ঞ।

পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর শোনার পর প্রথম কার কথা মনে পড়েছে?

রোজিনা: মায়ের কথা। মা চাইতেন না অভিনয় করি। চাইতেন পড়ালেখা করি, গান করি। তবে আমার মা প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেখে গেছেন।

দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছিল?

রোজিনা: দেখুন, একসময় আমি মঞ্চে অভিনয় করেছি। গুলিস্তানে শায়েস্তা হল ছিল। সেখানে এক সময় নাটক করতাম। মহিলা সমিতিতে নাটক করেছি। কেন? অভিনয় করতে চাই বলে, সিনেমা করব বলে। শাবানা-ববিতা আপার সিনেমা দেখে আমিও স্বপ্ন দেখতাম নায়িকা হব। মঞ্চে কাজ করতে করতে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। এক সময় একটি বিজ্ঞাপন করি, যা আমাকে পরিচিতি এনে দেয়। কিন্ত সংগ্রাম করতে হয়েছে সিনেমার নায়িকা হওয়ার জন্য। জার্নিটা সহজ ছিল না। প্রথমে কয়েকটি সিনেমায় ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু নায়িকা হতে সময় লেগেছে।

চিত্রনায়িকা রোজিনা। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমা থেকে কখনো বাদ পড়েছেন?

রোজিনা: মিন্টু আমার নাম সিনেমায় নাম ঘোষণা হওয়ার পরও বাদ পড়েছিলাম। সংবাদ সম্মেলন করে আমার নাম ঘোষণা পর্যন্ত করা হয়েছিল। রেণু আমার নাম। ওই সিনেমায় রোজিনা নাম রাখা হয়েছিল। সিনেমা থেকে বাদ পড়ার কথা শুনে সেদিন চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। আমার মা তখন সাহস দিয়েছিলেন। মা বলেছিলেন, ভেঙে পড়লে হবে? সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রথম প্রথম তিনি অভিনয়ে রাজি না হলেও এই কথাটি বলেছিলেন। তারপর আরও একটি সিনেমায় নেওয়ার পরও বাদ দেওয়া হয়েছিল আমাকে।

ঘুরে দাঁড়ালেন কীভাবে?

রোজিনা: মিন্টু আমার নাম সিনেমা থেকে বাদ পড়ার পর সিদ্ধান্ত নিলাম একক নায়িকা ছাড়া অভিনয় করব না। আরও একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম, কারও অফিসেও যাব না। যেখানে সম্মান নেই সেখানে যাব না। তখন গুলিস্তানে সিনেমার অফিস ছিল। সেই সময় এফ কবির চৌধুরী সাহেব একজন সহকারী পাঠান আমার বাসায়। আমাকে তার অফিসে যেতে বলেন। আমি বলেছিলাম, আমাকে নিয়ে সিনেমা করলে আমার বাসায় এসে কথা বলতে হবে, কারও অফিসে যাব না। তখন আমি নতুন একটা মেয়ে। সহকারীর কাছে এই কথা শুনে এফ কবির চৌধুরী সাহেব অবাক হয়েছিলেন।

তারপর কী হলো?

রোজিনা: এক মাস পর এফ কবির চৌধুরী আমার বাসায় আসেন। তখন মোহাম্মদপুরে থাকতাম। দরজা খোলার পর তিনি আমাকে দেখেন। আমার মা ছিলেন, মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রযোজক পেলে আমার পরের সিনেমার একক নায়িকা হবে তুমি। আমি বিশ্বাস করছিলাম না। কিন্তু এক মাস না যেতেই তিনি প্রযোজক নিয়ে আমার বাসায় আসেন, সবকিছু চূড়ান্ত করেন। সিনেমার নাম রাজমহল। শুটিং করলাম। রাজমহল মুক্তি পেল এবং এদেশে ইতিহাস সৃষ্টি করল। তারপর আমাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি, সামনে এগিয়ে গেছি।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

46m ago