রুবেলের সঙ্গে সম্পর্কটা বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের মতো ছিল: ফারুক আহমেদ

সদ্য প্রয়াত সহশিল্পী আহমেদ রুবেলকে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ।
আহমেদ রুবেল
ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

মেধাবী অভিনেতা আহমেদ রুবেল আর নেই। টিভি নাটকে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন রুবেল, অনেকগুলো সিনেমায় অভিনয় করেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

আহমেদ রুবেল ও অভিনেতা ফারুক আহমেদ ঢাকা থিয়েটারের হাত হদাই, বনপাংশুল, যৈবতী কন্যার মন, একাত্তরের পালা নাটকে অভিনয় করেছেন। শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রেও দুজনে একসঙ্গে অভিনয় করেন। হুমায়ূন আহমেদের যমুনার জল দেখতে কালো নাটকে দুজনের অভিনয় দর্শকরা মনে রাখবে অনেক দিন।

সদ্য প্রয়াত সহশিল্পী আহমেদ রুবেলকে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ।

ফারুক আহমেদ বলেন, '১৯৮৩ সালে আমি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হই। আহমেদ রুবেল একই দলে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে। ওই বছর আরও কয়েকজন যোগ দিয়েছিলেন। তার মধ্যে আমার স্ত্রীও ছিলেন। সেই যে পরিচয় হলো রুবেলের সঙ্গে, সারাজীবন ভালো সম্পর্ক ছিল আমাদের।

ঢাকা থিয়েটারের হয়ে আমরা প্রথম একসঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করি হাতহদাই নাটকে। তারপর এক এক করে যৈবতী কন্যার মন, একাত্তরের পালা, কেরামত মঙ্গল, বনপাংশুল নাটকে মঞ্চে অভিনয় করি। অনেকগুলো টেলিভিশন নাটকেও আমরা দুজনে অভিনয় করেছি। সেসব নাটক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

আহমেদ রুবেলকে চিনতাম বহু বছর ধরে। আমার জীবনে রুবেলকে কখনো মাথা উঁচু করে কথা বলতে দেখিনি। সবসময় কম কথা বলত। সম্মান করত বড়দের। আমাকে বড় ভাই ডাকত। আমাদের সম্পর্কটা বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের মতো ছিল। তারপরও তাকে বন্ধুর চোখে দেখতাম। পছন্দ করতাম, ভালোবাসতাম। প্রায় ২৫ বছর ঢাকা থিয়েটারের হয়ে একসঙ্গে কাটিয়েছি আমরা। কাজেই স্মৃতির শেষ নেই। সেসব স্মৃতি এখন মনে পড়ছে।

শ্যামল ছায়া সিনেমার জন্য এক মাস একসঙ্গে ছিলাম। সেখানে অসংখ্য ঘটনা, অসংখ্য মধুর স্মৃতি আছে, যা চোখে ভাসছে। বৃক্ষমানব নাটকে অভিনয় করেছিলাম। এটা হুমায়ূন আহমেদের নাটক। পুষ্পকথা নামের একটি নাটকে ছিলাম দুজনে। এটাও হুমায়ূন স্যারের নাটক।

হুমায়ূন আহমেদের যমুনার জল দেখতে কালো নাটকের একটি ঘটনা বলছি। একটি দৃশ্যে আমাকে চড় দিতে হবে। রুবেল বললেন, চড় দিতে পারব না। হুমায়ূন আহমেদে বললেন, কেন? রুবেল বললেন, ফারুক ভাই আমার বড় ভাই। স্যার হেসে বললেন, এটা তো নাটক। যাই হোক, শেষে ছোট্ট করে চড় দেন রুবেল। স্যার বললেন, হবে না, জোরে চড় দিতে হবে। শেষে জোর চড় দেওয়ার পর রুবেল আমাকে বার বার বলতে থাকলেন, ভাই কিছু মনে করবেন না।

আরেকবার সিলেটে গিয়েছি দুজনে একটি নাটকের শুটিং করতে। ফেরার দিনে বাসে ফিরব। কিন্ত রুবেল আমাকে বাসে আসতে দেবেন না। তিনি বললেন, আপনি আমার সঙ্গে গাড়িতে যাবেন। আমি যতই না করি, তিনি মানেন না। অনেক অনুরোধ করার পর রাজি হয়ে যাই।

তারপর ফেরার সময় রুবেল সামনে বসেন ড্রাইভারের পাশের সিটে। আমাকে প্রাইভেটকারের পেছনে বসতে অনুরোধ করেন। আমি একাই পেছনের সিটে বসি। একসময় তিনি আমাকে একটা বালিশ দেন। তারপর বলেন, বড় ভাই, আপনি আরাম করে ঘুম দেন। এই হচ্ছেন আহমেদ রুবেল।

এরপর রাত ৩টার সময় বলেন, বড় ভাই, চলুন চা খাই। রাস্তার পাশে গাড়ি থামল, আমরা চা খেলাম। আবার গাড়িতে উঠার পর রুবেল বললেন, এবার আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন বড় ভাই। আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সকালবেলা আমার বাসার সামনে গাড়ি আসার পর ডেকে তোলেন। তারপর বলেন, বড় ভাই, এবার আপনি বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন।

কতটা ভালো মানুষ হলে এমন করে সহশিল্পীর জন্য ভাবতে পারে এবং করতে পারে? সত্যি কথা বলতে, রুবেল ছিলেন আমার দেখা খুব ভালো একজন মানুষ।'

 

Comments