স্বরূপে ফিরবেন সালমান: জন্মদিনে বলিউড বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা
সালমান খান নামটি প্রায় তিন দশক ধরে বলিউডের জন্য সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে। কারো কাছে তিনি সুপারস্টার, কারো আছে ভাইজান। অভিনেতা হিসেবে ৩৫ বছরের ক্যারিয়ারে সালমান খান শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যার বেশিরভাগই বক্স অফিসে সফল হয়েছে।
বলিউডের খানদের অন্যতম ত্রয়ী সালমান নিজেকে সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গেছেন। বছরের পর বছর ধরে বিশাল ফ্যানবেস ধরে রাখতে পেরেছেন। যদিও গত কয়েক বছর ধরে তিনি খুব আলোচনায় ছিলেন না। কারণ সর্বশেষ সিনেমাগুলো বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, তার অভিনয় দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে।
আজ ২৭ ডিসেম্বর সালমান খানের জন্মদিন। তার জন্মদিনে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন বলিউডের অনেকে। সেখানে আগামী বছরগুলোতে সালমানকে নিয়ে তাদের আশা ও প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে।
সালামানের কী পরিবর্তন দরকার
নো এন্ট্রি (২০০৫) ও রেডি (২০১১) সিনেমার পরিচালক ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আনিস বাজমি। তিনি বলেছেন, সালমান যা করেন, তা কেউ করতে পারে না। তিনি মনে করেন, সালমানের রিব্র্যান্ডিংয়ের প্রয়োজন নেই, তবে একটি কমেডি সিনেমা করা উচিত। কিংবা দর্শকের আগ্রহ আছে এমন বিষয় বেছে নেওয়া উচিত।
বাজমি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'আমি মনে করি না সালমানের ব্র্যান্ড পরিবর্তনের দরকার আছে, কারণ মানুষ তাকে ভালোবাসে। এমনকি যদি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তাহলে তিনি নিজেই সেটা ঠিক করতে পারবেন। তিনি জানেন কী করতে হবে। যখন থেকে আমি তার সঙ্গে কাজ করেছি, আমি তাকে প্রতিনিয়ত উন্নতি করতে দেখেছি।'
এই চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেছেন, সালমানকে 'মাচো হিরো' ইমেজ থেকে কিছুটা দূরে সরে যেতে হবে এবং আবার কমেডি করতে হবে। তবে আমার মনে হয় না তার কাজের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার দরকার আছে। আমি তার দারুণ কমেডি মিস করি, তার মধ্যে অসাধারণ কৌতুকবোধ আছে।
বিষয়বস্তু নির্বাচনে সতর্কতা
বলিউডের অন্যতম সফল তারকা হিসেবে পরিচিত সালমান খানের শেষ কয়েকটি ছবি রাধে, অন্তিম এবং কিসি কা ভাই কিসি কি জান বক্স অফিসে আশানুরূপ ফল বয়ে আনতে পারেনি। বলিউড বিশ্লেষকরা তার শেষ সিনেমাগুলোতে 'বিষয়বস্তুর অসামঞ্জস্যতা' চিহ্নিত করেছে। বক্স অফিসে ৪০০ কোটি রুপি আয় করার পরেও সালমানের টাইগার থ্রি এ বছর সবচেয়ে কম আলোচিত চলচ্চিত্রগুলোর একটি। বিপরীতে শাহরুখ খানের পাঠান সিনেমাতে ক্যামিও তার সর্বশেষ সিনেমার চেয়ে দর্শকের বেশি ভালোবাসা পেয়েছিল। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ কোমল নাহতা বলেছেন, সালমানকে স্ক্রিপ্টগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে। কারণ বিষয়বস্তু ভালো না হলে কোনো তারকাখ্যাতি আপনাকে বাঁচাতে আসবে না।'
কোমল নাহতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আরও বলেন, 'আমি মনে করি সালমান খান ও তার ক্যারিয়ারের সঙ্গে যে বিষয়টি ভুল হচ্ছে- তা হলো পছন্দের বিষয়। মনে হচ্ছে, তিনি এমন চলচ্চিত্র বেছে নিচ্ছেন, যেগুলো মৌলিক স্ক্রিপ্ট, কিন্তু বিস্ময়কর কিছু বয়ে আনছে না। সুতরাং তাকে এসব থেকে বের হতে হবে ও চলচ্চিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। একটি চলচ্চিত্র কেবল স্ক্রিপ্টে ভালো হতে পারে, কিন্তু বিষয়বস্তু ভালো না হলে কোনো স্টারডম উদ্ধার করবে না। আর বিপরীতে কনটেন্ট ভালো হলে তারকাদের অভাবও কোনো সিনেমার সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। সুতরাং আমি মনে করি, তার কী ধরণের চলচ্চিত্র করা দরকার তা নিয়ে খুব সতর্ক হওয়া দরকার। আমার মতে, তার আরও ভাল পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা দরকার।'
নাহতা আরও উল্লেখ করেছেন, 'সালমানকে 'অভিনয়ে মনোনিবেশ করা' দরকার। কিসি কা ভাই কিসি কি জানে এমন কিছু দৃশ্য ছিল যেখানে তার চুলের স্টাইল মাঝপথে বদলে যায়। আমি বলছি না, এ কারণে একটি চলচ্চিত্র হিট বা ফ্লপ হতে পারে, তবে এই জিনিসগুলো দর্শককে বিরক্ত করে। এখনকার দর্শকরা খুব স্মার্ট, তারা ভালো কাজ দেখতে চায়। তাই আমি মনে করি, সালমানকে বিষয়বস্তু নির্বাচন ও তারপর শুটিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা দরকার। তার উচিত টপলাইন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা।'
'যে কোনো তারকার জন্য বছরের পর বছর ধরে ফ্লপ সিনেমা করলে স্টারডম কমে যায় এবং ভক্তরা আস্থা হারিয়ে ফেলে। তাই সালমানকে আরও সতর্ক হতে হবে,' বলেন নাহতা।
বাধা পেরোনোর সময় এসেছে
চলচ্চিত্র প্রদর্শক ভি. চৌহান বলেছেন, সালমান তার অভিনয় দিয়ে দর্শককে অবাক করে দেওয়ার জন্য পরিচিত। তার 'মাচো হিরো' ইমেজ থেকে বের হয়ে আবারও অভিনয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, 'আপনি যদি সালমানের ক্যারিয়ারের গ্রাফ দেখেন, তিনি 'মেনে পেয়ার কিয়া' সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় প্রবেশ করেছিলেন। তারপর তিনি কুরবান ও সাজনের মতো কয়েকটি প্রেমের গল্প নিয়ে কাজ করেছিলেন। এরপর তিনি নো এন্ট্রির মতো মাল্টি-স্টারার সিনেমাতে অভিনয় করেন। সবগুলোতে তিনি সফল ছিলেন। এরপর পারিবারিক কমেডি ঘরোনার সিনেমা করেন। যেখানে তিনি দারুণ জনপ্রিয় কিছু গান উপহার দেন। এরপর ডেভিড ধাওয়ানের সঙ্গে জুড়োয়া, বিবি নাম্বার ওয়ানের মতো চলচ্চিত্র করেন। এরপর তার যুবরাজ ও আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। তবে দাবাং ও ওয়ান্টেড দিয়ে নিজেকে আবার মেলে ধরেন সালমান খান। তখন থেকেই তিনি এই 'মাচো' ইমেজ ধরে রেখেছেন।'
চৌহান আরও বলেন, 'এখন সালমানকে নতুন করে আবিষ্কারের সময় এসেছে। তার স্টার পাওয়ার বিশাল, তাই সালমান আবারও দুর্দান্তভাবে ফিরতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।'
Comments