ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

বাগেরহাটে ২ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, ভেসে গেছে ঘেরের মাছ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বাগেরহাটে ২ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘেরের মাছ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খেতের ফসল। এখনো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে অধিকাংশ এলাকা।
সোমবার একদিনে জেলায় ২১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বাগেরহাটে ২ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘেরের মাছ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খেতের ফসল। এখনো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে অধিকাংশ এলাকা।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার একদিনে জেলায় ২১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে প্রভাবে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন আছে জেলার বেশিরভাগ এলাকা। তবে, এবারের ঝড়ে কোনো মানুষ আহত বা নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে সুন্দরবনের কোনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় ২ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ৭৫০টি ঘের ও পুকুরের মাছ। এতে প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা ৮৫০ হেক্টর রোপা আমনের জমি, ৩৭৫ হেক্টর শীতকালীন সবজি, ১৭ হেক্টর পান বরজ, ১১০ হেক্টর কলা, ২০ হেক্টর মরিচ, ৭ হেক্টর পেঁপে ও ৬ হেক্টর বিভিন্ন শীতকালীন সবজির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে জমে থাকা পানি দ্রুত অপসরণ না হলে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাট শহরের মাঝিডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, বারুইখালী, বাগেরহাট সদরের মাঝিডাঙ্গা, কার্তিকদিয়া, যাত্রাপুর, কচুয়ার নরেন্দ্রপুর, পদ্মনগর, গোপালপুর, ভান্ডারখোলা, শরণখোলার সাউথখালী, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, ধানসাগরসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ২ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝড়ের ফলে বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অন্তত ৩৫টি খুঁটি ও বেশকিছু সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, জেলার বেশির ভাগ এলাকা এখনো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন আছে।

বাগেরহাট শহরের মাঝিডাঙ্গা এলাকার তানভীর শেখ বলেন, 'বেড়িবাঁধ ভেঙে রাতে পানি প্রবেশ করে আমাদের বাড়িঘর সব ডুবে গেছে। মাছের ঘের, সবজি ও ধান ক্ষেত সব এখন পানির নিচে। আমাদের গ্রামের অন্তত ৪০০ পরিবার পানিবন্দি। এক কথায় আমাদের জনজীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।'

কচুয়া উপজেলার পদ্মনগর গ্রামের ফরমান শিকদার বলেন, 'গাছ পড়ে আমার বসত ঘরের মাঝ দিয়ে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এই ঘরে আর বসবাস করার মতো অবস্থা নেই। শ্রমিক দিয়ে যে গাছ কেটে সরাব সেই আর্থিক সক্ষমতাও নেই আমার।'

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, 'বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার ৭৫০টি মৎস্য ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এসে খামারিদের প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাদের মৎস্য ঘের সংস্কার করে পুনরায় মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'

প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় বেশকিছু আমনের খেত, মৌসুমি সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানি নেমে না গেলে কৃষকদের আরও বেশি ক্ষতি হবে।'

বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে আমাদের অনেক খুঁটি ও তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইন সংস্কার করতে ঠিকাদার ও আমাদের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে শতাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যতদ্রুত সম্ভব বাগেরহাটে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক করতে।'

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য খাতেও বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Khagrachhari violence: 3 dead, 4 sent to CMCH 'with bullet wounds'

Three indigenous people died of their injuries at a hospital in Khagrachhari yesterday and early today, hours after arson attacks and violence in the district

1h ago