প্রবল বর্ষণে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, শহরে জলাবদ্ধতা
প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। সুনামগঞ্জ শহরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সুরমা নদীর পানি জেলার প্রতিটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এতে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
বাপাউবোর তথ্যমতে, আজ সোমবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও একই সময়ে নদীটি সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার এবং দিরাই উপজেলা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া জেলার যাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, কুশিয়ারা, চলতি, পাটলাই, নলজুর, খাসিয়ামারা ও কালনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বারিপাত স্টেশনের তথ্যমতে, আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ শহরে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৩২ মিলিমিটার ছিল।
ভারতের চেরাপুঞ্জির পাদদেশে অবস্থিত ছাতক উপজেলায় আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতির কবলে পড়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী কবির আহমেদ বলেন, 'বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এবং পানির উচ্চতা এভাবে আরও ২ দিন বাড়লে গত বছরের মতো এবারও আমার মাছের খামার ডুবে যাবে এবং আমার বাড়িও বন্যাকবলিত হবে।'
উপজেলার নিচু এলাকা ছাড়াও সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর থাকায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের অনেক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বাপাউবো সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, 'জেলার বন্যা পরিস্থিতি সাময়িক। আজ সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত প্রায় থেমে গেছে। এরকম থাকলে দ্রুতই পানি নেমে যাবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।'
তবে দীর্ঘমেয়াদী বন্যার জন্য সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে এবং রোববার জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে জরুরি সমন্বয় সভারও আয়োজন করে বলে জানান তিনি।
গত বছরের জুন মাসে সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয় প্রবল বর্ষণের ফলে ১৬ জুন ১ দিনের মধ্যেই সুনামগঞ্জ জেলা প্লাবিত হয়।
সড়ক, বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়ে সারাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে সুনামগঞ্জের। জেলা কয়েক লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু দালান ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়।
সরকারি হিসাব মতে, মাসব্যাপী এ বন্যায় জেলার ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
Comments