চট্টগ্রামে বন্যা: ৩ উপজেলার ২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। ছবিটি মঙ্গলবার বিকেলের চন্দনাইশের হাশিমপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান

ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় চট্টগ্রামের ৩ উপজেলায় ২ লাখের বেশি গ্রাহক ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন ও উপকেন্দ্রগুলো। বন্যার পানি দ্রুত নেমে না গেলে এসব এলাকার মানুষকে কতদিন বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হবে তা বলতে পারছেন না পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলার সাব স্টেশনগুলোর যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পানি জমে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ওই ৩ উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি।

বিআরইবি চট্টগ্রাম সূত্র জানায়, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়ায় কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। পটিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে সোমবার বিকেল থেকে।

পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। ছবিটি মঙ্গলবার বিকেলের চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বাঁশখালী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-টেকনিক্যাল) মো. আমজাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবস্টেশনগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩ উপজেলার ২ লাখ গ্রাহক এখন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন।'

'পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী দিয়ে ভেসে আসা গাছের গুড়িতে লেগে সঞ্চালন তার ক্ষতিগ্রস্ত যাওয়ায় পটিয়ার বিদ্যুৎ বন্ধ আছে। তবে আমরা শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিকল্প সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পটিয়া ও এর আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। বাঁশখালীতে গতকাল ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। পানির কারণে মঙ্গলবার থেকে চন্দনাইশ উপজেলা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে,' তিনি বলেন।

তিনি বলেন, 'সাতকানিয়ার কেরানিরহাটের পরিস্থিতি আরও খারাপ। এলাকার স্থানীয় সাবস্টেশনটি এখন ৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। যন্ত্রপাতি ডুবে গেছে। মহাসড়ক ও এর আশপাশের এলাকায় পানি থাকায় আমাদের প্রকৌশলী ও কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় আটকে আছেন।'

কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে জানতে চাইলে আমজাদ হোসেন বলেন, 'এই মুহূর্তে এটা বলা কঠিন। আমাদের অনেক যন্ত্রপাতি পানির নিচে। সঞ্চালন লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে এখন বলা কঠিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কারো কিছুই করার নেই।'

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পানি বাড়ায় এবং বিদ্যুৎ না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় লোকজন। অনেকে নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। মোবাইলে চার্জ না থাকায় অনেকেই স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না।

অবিরাম বৃষ্টিতে বিপাকে রয়েছে শিশুরাও। ছবিটি মঙ্গলবার বিকেলের চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৫টি উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার অবস্থা খারাপ।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বন্যায় ৩ উপজেলার ৩১ হাজার বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত, জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

'পরিস্থিতি মোকাবিলায়, সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জনগণকে সহায়তা করার জন্য কাজ করছে। আমরা ইতিমধ্যে ৩৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছি, আট লাখ ২৫ হাজার টাকা নগদ বিতরণ করা হয়েছে এবং বন্যা দুর্গত মানুষের মধ্যে খাবার স্যালাইন এবং পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট বিতরণ হয়েছে,' বলেন ডিসি।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ পরিবার। এর মধ্যে চন্দনাইশে ৫ হাজার পরিবার, সাতকানিয়ায় ২২ হাজার ৫০০, লোহাগাড়ার ৪ হাজার, এবং বাঁশখালীতে ১০ হাজার পরিবার। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিভাগ থেকে শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধ করণ ওষুধসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

8h ago