গাইবান্ধার চরাঞ্চলে বন্যা, তলিয়ে গেছে ১০০ বাড়িঘর, ১৭৮২০ পরিবার পানিবন্দী

হঠাৎ করে পানি বাড়ায় অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেননি। বাড়িঘর নদীতে দেবে যাওয়ায় মাচা করে দিন কাটাতে হচ্ছে গাইবান্ধার চরাঞ্চলের মানুষদের। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

গত বুধবার সকালে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি ছিল বিপৎসীমার নিচে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। 

পানি বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার এক লাখের বেশি মানুষ।

জেলার এই চার উপজেলায় মোট ১৬৫টি চরে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের বাস।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চর গুপ্তমনি, রসুলপুর, মানিককর এবং গাইবান্ধা সদর উপজেলার খারজানী চর ঘুরে দেখা যায় হঠাৎ করে পানি অনেক বেড়ে গেছে।

গাইবান্ধা সদরসহ চার উপএজলার খারজনী, গুপ্তমনি ও রসুলপুর চরের প্রায় বেশিরভাগ বাড়িঘর এখন পানির তলে। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

অন্যদিকে, বন্যার প্রবল স্রোতে ভাঙতে শুরু করেছে খারজানী চর। এই চরের প্রায় ১৪০টি পরিবারের মধ্যে ৮০টি পরিবারের বাড়িঘর ইতোমধ্যে নদীর মধ্যে দেবে গেছে। 

ভাঙনের কারণে পানির স্রোতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে টিনের ঘরগুলো। উপায় না দেখে চরের বেশিরভাগ মানুষ ঘরবাড়ি নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

খারজানী চরের বাসিন্দা রবিউল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত চারদিন ধরে পানি বাড়ছে। কিন্তু বুধবার থেকে পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এরপর ব্রহ্মপুত্রের তীব্র স্রোতে ভাঙন দেখা দেয়। প্রায় ৮০টি ঘর হঠাৎ করে পানির নিচে দেবে যায়।'

চরাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, গত পাঁচ বছরে তারা এত দ্রুত পানি বাড়তে দেখেননি। পানি আরও বাড়লে আর কেউ এখানে থাকতে পারবে না।

হঠাৎ বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার এক লাখের বেশি মানুষ। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

এর মধ্যে চরে বিশুদ্ধ পানির সংকট শুরু হয়েছে। নলকূপ ডুবে গেছে। উপায়ান্তর না থাকায় এসব টিউবওয়েলের পানিই পান করছে অনেক পরিবার।

বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায়, যাদের সুযোগ আছে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। তবে অনেকে নৌকা না থাকায় গবাদি পশু-পাখি নিয়ে পড়েছেন বিপদে। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এখন বাস করছেন মাচার উপর। বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চার উপজেলায় প্রায় ১৮১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ যাওয়া শুরু করেনি।

জেলা প্রশাসন বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সদর, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা উপজেলার প্রায় ১৭ হাজার ৮২০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চার উপজেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৮০টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার বিকেলে খারজানী চরের বন্যা কবলিত এলাকা দেখতে যান গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল। এ সময় তিনি বন্যাকবলিতদের মাঝে ৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার, জিআর চাল, জিআর ক্যাশ, নৌকা ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Barishal University protest

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

10h ago