তিস্তা সড়ক সেতু রক্ষা বাঁধে ধস

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর পশ্চিম পাশে সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার এলাকা ধসে পড়ছে। এতে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোত বাঁধের গায়ে সরাসরি আঘাত করায় এ ধস দেখা দিয়েছে।
এই ধসে লালমনিরহাট-রংপুর সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। পাশাপাশি আশপাশের অন্তত তিনটি গ্রামের এক হাজারেরও বেশি পরিবারের বসতভিটা ও কৃষিজমি সরাসরি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা—দ্রুত মেরামত না হলে বাঁধের সঙ্গে সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দুই জেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর উদ্দিন বলেন, 'গত দুই বারের বন্যায় বাঁধের ক্ষতি হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো সংস্কার কাজ করেনি। এবারের বর্ষায় পানি বাড়তেই একের পর এক সিসি ব্লক তলিয়ে যাচ্ছে। নিচে গভীর গর্ত তৈরি হয়ে ভাঙন আরও ভয়াবহ হচ্ছে।'
মহিপুরের কৃষক পনির উদ্দিন হক বলেন, 'এই বাঁধ দ্রুত ঠিক না করলে সেতু ভেঙে যেতে পারে। সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতা হবে, জমি বালুচরে ঢেকে যাবে, চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে।'
আরেক কৃষক মোহর আলী বলেন, 'বাঁধ রক্ষা ছাড়া আমাদের সামনে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বসতভিটা ও সেতু রক্ষা করতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।'

এ বিষয়ে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, বাঁধের কিছু সিসি ব্লক ধসে গেছে। বাঁধ পুরোপুরি ভেঙে পড়া ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি চলছে। পানি কমে গেলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার শুরু হবে।
মহিপুরের স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম সতর্ক করে বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া সেতু ও বাঁধ রক্ষা সম্ভব নয়। বাঁধ সম্পূর্ণ ধসে গেলে ক্ষতি হবে অপূরণীয়।'
আজ শুক্রবার ভোর থেকে তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি কমতে শুরু করেছে। তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে সকাল ৯টায় পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, 'বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল না থাকায় পানি দ্রুত কমছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচে থাকায় তিস্তার পানি দ্রুত সরে যাচ্ছে, ফলে তিস্তাপাড়ের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে।'
চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করায় অনেকে সরকারি রাস্তা, বাঁধ ও উঁচু স্থান থেকে ঘরে ফিরছেন। তবে কিছু পরিবার এখনো নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন।
লালমনিরহাটের বাগডোরা এলাকার কৃষক সেকেন্দার আলী বলেন, 'পানি কমায় আমন ধান ও সবজিখেত বাঁচানো গেছে। তবে চলতি মাসে তিনবার তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তিন দফা বন্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট এখনো ডুবে থাকায় চলাচল কষ্টকর হয়েছে।'
নাগেশ্বরী উপজেলার চর বামনডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শামসুল আলম জানান, দুধকুমার নদের পানি কমেছে। তবে বাড়িতে এখনো বন্যার পানি রয়েছে। তারা সরকারি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন। বন্যার পানি সম্পূর্ণ নেমে যাওয়ার পর বাড়িতে ফিরবেন।
Comments