জেনারেটরের জন্য ডিজেল কিনতে ফিলিং স্টেশনে ভিড়
লোডশেডিংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিজেলের চাহিদা। নগরবাসী লোডশেডিং থেকে পরিত্রাণ পেতে জেনারেটরের ব্যবহার বাড়িয়েছে বহুগুণ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে বিদ্যুতের বিকল্প চাহিদা পূরণ করছে জেনারেটর। এসব জেনারেটরের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ ডিজেল।
গতকাল রোববার ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জ্বালানি তেলের ফিলিং স্টেশনগুলোতে ডিজেলের জন্য দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। যানবাহনের তুলনায় ড্রাম কিংবা প্লাস্টিক জারে ডিজেল বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে গাড়ি চালকদের।
তবে হঠাৎ ডিজেলের বিক্রি বেড়ে গেলেও এ নিয়ে চিন্তিত নয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে বর্তমানে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ডিজেল মজুদ আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে জ্বালানি তেলের মূল স্থাপনা (এমআই) পতেঙ্গা ডিপোতে ডিজেল মজুদ আছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন। এ ছাড়া, ইস্টার্ন রিফাইনারিতে মজুদ আছে আরও ২৬ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন ডিজেল।
বিপিসির বিপণন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশে গড়ে দৈনিক ১০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ব্যবহার হচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ ডিজেল মজুদ আছে, তা দিয়ে প্রায় দেড় মাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
তারা আরও জানান, ফিলিং স্টেশনের মালিকপক্ষ বর্তমানে ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে পারে ৫ দিন। শুক্রবার ও শনিবার ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ থাকে। আগে শুধুমাত্র শুক্রবার ডিপো থেকে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ ছিল। হয়তো এই কারণে নগরের বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে রোববার ডিজেল ঘাটতি হয়ে থাকতে পারে।
জানতে চাইলে যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে ডিজেলের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কোথাও ঘাটতি হলে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সাময়িক।'
চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, 'অতিরিক্ত গরমের কারণে চট্টগ্রামে রোববার বিদ্যুতের চাহিদা দেড় হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। তবে উৎপাদন কম থাকায় জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি। এই কারণে রোববার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৩৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হয়েছে।'
চট্টগ্রামের কলেজ রোড এলাকার কিউসি ফিলিং স্টেশনে ডিজেল কিনতে আসা মফিজুর রহমান জানান, দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর চালাতে তিনি ডিজেল কিনতে এসেছেন। প্রায় ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি ডিজেল পেয়েছেন।
নগরের দামপাড়া এলাকার পুলিশ লাইন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য অপেক্ষমাণদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে রোববার রাতে।
এই ফিলিং স্টেশন ছাড়াও ডিজেলের জন্য ভিড় ছিল ষোলশহর এলাকার সেনা কল্যাণ ফিলিং স্টেশন, টেক্সটাইল গেইট এলাকার এম আলম ফিলিং স্টেশনেও।
জেনারেটরের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ডিজেল কিনতে ভিড় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জাকির হোসেন রোডের শাহ আমিনুল্লাহ ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার কবিরুল ইসলাম।
সম্প্রতি লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিজেলের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বন্দর এলাকার জ্বালানি তেলের ডিলার মেসার্স সিরাজুল হক এন্ড সন্স'র মালিক মুনতাসিরুল হক।
তিনি বলেন, 'আশপাশে কারখানা বেশি। এসব কারখানায় জেনারেটর বেশি ব্যবহৃত হয়। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় ডিজেল কিনতে ক্রেতারা ভিড় বেশি করছেন।'
চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবুল হাসনাত বলেন, 'লোডশেডিং বেশি হওয়ায় ডিজেলের বাড়তি চাহিদা যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। স্বাভাবিক সময়ে ৩ হাজার লিটার বিক্রি হলেও এখন ৪ থেকে ৫ হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে।'
Comments