প্রতিপক্ষকে হত্যা, ভাড়াটে খুনিকে ধরিয়ে দিয়ে বাঁচার চেষ্টা মাদক কারবারির

আব্দুস সোবহান। ছবি: সংগৃহীত

মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভাড়াটে খুনিকে বিদেশি অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষকে হত্যা করেন আব্দুস সোবহান। পরে নিজেই পুলিশকে ফোন করে হত্যাকারীকে ধরিয়ে দেন এবং অস্ত্র উদ্ধারে সহায়তা করেন।

কিন্তু এত কিছু করেও আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকার মাদক কারবারি সোবহান। আজ শুক্রবার ভোরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানায়, বাকলিয়া তক্তারপোল এলাকায় গত ২৫ জুলাই দুপুরে আরাকান রোড সংলগ্ন গাফফার কলোনি এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় মাদক কারবারি মহিউদ্দিনকে। তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের ছক তৈরি করেন ১৮টি মাদক মামলা ও একটি হত্যা মামলার আসামি আব্দুস সোবহানের।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসিবুল হক আসিফ ও মো. সুমনকে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করেন সোবহান। তাদের একটি পিস্তল ও গুলি সরবরাহ করেন সোবহান নিজেই। সেই অস্ত্র দিয়েই হত্যা করা হয় মহিউদ্দিনকে।'

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, হত্যার মোটিভ ঘোরাতে ডিবিকে দিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের করানো হয় এবং ভাড়াটে খুনিদের ধরিয়ে দেওয়া হয়।

তদন্তকারীরা জানায়, মহিউদ্দিন হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভির সূত্র ধরে সুমন ও আসিফকে শনাক্ত করা হয়। সুমন মহিউদ্দিনকে বাসার বাইরে ডেকে আনেন এবং আসিফ তার পেটে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর ২৭ জুলাই তক্তারপোল খালপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তলসহ সুমনকে গ্রেপ্তার করে সিএমপির একটি টিম। 

অস্ত্র উদ্ধারের পর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয় যে, বাকলিয়া এলাকায় টহল দেওয়ার সময় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি পুলিশের গাড়ি দেখে দৌড় দেন। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে একজনকে আটক করতে সক্ষম হয় এবং তিনি মহিউদ্দিন হত্যায় জড়িত সুমন।

সুমনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তক্তারপোল এলাকার আবু সওদাগর কলোনির একটি ঘরের পাশে থাকা ইটের স্তুপের নিচ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের পর সোবহান আসিফকে ফোন করে তাদের বোয়ালখালী উপজেলায় আত্মগোপন করতে বলেন। সেসময় অস্ত্রটি ছিল সুমনের কাছে। পরে আসিফ সাতকানিয়া ও সুমন কুমিল্লায় পালিয়ে যান। 

পুলিশ জানায়, ২৭ তারিখ সোবহানের লোকজন সুমনকে অস্ত্র ফেরত দিতে আসতে বলে। আর সুমন বাকলিয়া আসার পরই ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। অস্ত্রসহ সুমনকে নিয়ে বাকলিয়া থানায় গেলে ডিবি পুলিশ মহিউদ্দিন হত্যা মামলার কথা জানতে পারে।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেন। পরে পুলিশ আসিফকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গত ১ আগস্ট সুমন এবং ৩ আগস্ট আসিফ আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুস সোবহানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি ইখতিয়ারউদ্দিন বলেন, 'মহিউদ্দিন হত্যা মামলায় তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি সোবহানকে তক্তারপোল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন পর কারাগারে থাকার পর কিছুদিন আগে বের হন। বাকলিয়া এলাকায় তিনি মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ওই এলাকায় আগে থেকেই মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করতে সোবহান। মহিউদ্দিনের সঙ্গে এই বিরোধের জেরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সোবহান।

ওসি বলেন, 'সুমন ও আসিফ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিলেও, এর মাস্টারমাইন্ড সোবহান। স্থানীয় মাদক কারবারের একক নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে এবং আধিপত্য ধরে রাখতে নিজেই পুরো হত্যাকাণ্ডের ছক সাজান।'

Comments

The Daily Star  | English
tarique rahman warns against mob justice

BNP, allies to contest polls unitedly

BNP and its like-minded partners, which joined the simultaneous anti-fascist movement, will take part in the February election as an alliance.

25m ago