বান্দরবানে পাহাড় কেটে-ঝিরির পানি প্রবাহ বন্ধ করে বন উজাড়

পাহাড় কেটে তৈরি রাস্তার ওপর বনের কাটা গাছ ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: স্টার

বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের পানছড়ি মৌজার চিনি পাড়ার খেদার ঝিরি এলাকায় গত এক মাস ধরে নির্বিচারে প্রাকৃতিক বনের গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, টংকাবতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুর রহিমসহ স্থানীয় আব্দুল শুক্কুর এবং কালু মেম্বার এ কাজে জড়িত। গাছ পাচারের জন্য তারা খেদার ঝিরির পানি প্রবাহ বন্ধ করে এবং এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করেছেন। এতে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন চিনি পাড়ার বাসিন্দারা।

বান্দরবান সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের পশ্চিম অংশের পাদদেশে চিনি পাড়ার অবস্থান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে খেদার ঝিরির ওপর প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মতো গাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে খেদার ঝিরির স্বাভাবিক পানি প্রবাহ। ঝিরির আশপাশেই গাছ কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এসব গাছের মধ্যে আছে কড়ই, চাপালিশ, গামারি ও সেগুনসহ আরও নানা প্রজাতির বনজ গাছ।    

এসব ট্রাকে করে পাচার হচ্ছে বনের গাছ। ছবি: স্টার

চিনি পাড়ার বাসিন্দারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যার আগেই বনের কাটা গাছ ট্রাকে করে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও আমিরাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। পাড়াবাসীর পানির একমাত্র উৎস টংকাবতী খালের ওপর দিয়ে সারাদিন এসব ট্রাক চলাচল করায় পানি ঘোলা থাকে। যে কারণে পাড়ার ৬৫টি পরিবার সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছে।

খেদার ঝিরি এলাকায় কথা হয় গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও ট্রাকচালক মো. ইউসুফের সঙ্গে। তিনি জানান, বন থেকে গাছ কেটে খেদার ঝিরি এলাকায় জড়ো করেন তারা। তারপর সেগুলো ট্রাকে করে লোহাগাড়া ও আমিরাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া হয়।

এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। ছবি: স্টার

অপর শ্রমিক মো. শহীদ জানান, তিনি দৈনিক ৬০০ টাকার বিনিময়ে গাছ কাটার কাজ করছেন। তার সঙ্গে কক্সবাজারের রামুর আরও ১৩ জন শ্রমিক রয়েছেন। গত ১২ দিন ধরে আব্দুর রহিম ও আব্দুল শুক্কুরের অধীনে তারা এই কাজ করছেন।

স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত আব্দুর রহিম টংকাবতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। তার বাড়ি চট্টগ্রাম লোহাগাড়ায় হলেও দুই বছর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তর করে টংকাবতী এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। বর্তমানে তিনি এলাকায় বড় গাছের সওদাগর হিসেবে পরিচিত।

তার বিরুদ্ধে গত বছর টংকাবতী ইউনিয়নের রমজু পাড়া ও বলী পড়া এলাকায় ঝিরি-ঝর্ণা থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন এবং প্রাকৃতিক বনের গাছ কেটে হাতি দিয়ে পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে।

গাছ পাচারের জন্য রাস্তা তৈরির ফলে বন্ধ হয়ে গেছে খেদার ঝিরির স্বাভাবিক পানি প্রবাহ। ছবি: স্টার

চিনি পাড়ার বাসিন্দারা জানান, দুই মাস আগে বর্ষা মৌসুমেও খেদার ঝিরি এলাকায় বনের গাছ কেটে হাতি দিয়ে পাচার করেছেন আব্দুর রহিম।

এ বিষয়ে আব্দুর রহিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা চারজন মিলে "জোত-পারমিটের" মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকাধীন বাগান কিনেছি এবং বৈধভাবে সেসব বাগানের গাছ কাটা হচ্ছে।'

পাহাড় কেটে রাস্তা ও ঝিরির পানি প্রবাহ বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'গাছ নেওয়ার জন্যই রাস্তা বানিয়েছি।'

টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য য়ংওয়াই ম্রো ও পানছড়ি মৌজার হেডম্যান ঙানওয়াই ম্রো ডেইলি স্টারকে জানান, তারা খেদার ঝিরি এলাকায় গাছ কাটার কথা জানেন, তবে সেগুলো প্রাকৃতিক বনের কি না তা তারা অবগত নন।

পাচারের জন্য ট্রাকে করে নেওয়া হচ্ছে গাছ। ছবি: স্টার

বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফখর উদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও ঝিরির স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা পরিবেশ আইনে অপরাধ। এ বিষয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।'
 
বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি আমি জানি না। তবে প্রাকৃতিক বনের গাছ হোক কিংবা ব্যক্তি মালিকাধীন বাগানের গাছ হোক, গাছ কাটার ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি গাছ কাটতে পারে না। এ বিষয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Rampal fouling 2 Sundarbans rivers

The Rampal power plant began operation in late 2022 without an effluent treatment plant and has since been discharging untreated waste into the Pasur and Maidara rivers next to the Sundarbans.

4h ago