কর্ণফুলীতে এস আলমের পোড়া চিনি, মরে ভেসে উঠছে মাছ

পোড়া চিনি কলের দূষিত রঙের পানি মিশে মাছ মরে ভাসছে কর্ণফুলী নদীতে। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের চিনিকলের পুড়ে যাওয়া অপরিশোধিত চিনি মিশ্রিত পানি পাশের কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশে জলজ পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। নদীতে আজ সকাল থেকে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে।

গত সোমবার এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের একটি গুদামে আগুন লাগে। গুদামে থাকা প্রায় এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুই দিন পরও এই আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দি বলেন, পুড়ে যাওয়া গুদাম থেকে কাঁচা চিনি অপসারণ না করা পর্যন্ত আগুন সম্পূর্ণ নেভানো যাবে না।

এরই মধ্যে কারখানা থেকে লাল রঙের পোড়া দূষিত তরল কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশছে। এর ফলে কিছু কিছু এলাকায় নদীর পানির রঙও বদলে গেছে।

এস আলম গ্রুপের পোড়া গুদাম থেকে চিনিমিশ্রিত লাল রঙের পানি মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। ছবি: রাজীব রায়হান

স্থানীয়রা জানান, তারা নদীর বিভিন্ন স্থানে মাছ, কাঁকড়া, সাপ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীকে মৃত অবস্থায় ভাসতে দেখেছেন।

বুধবার সকালে চিনিকলের আশপাশে নদীতে লাল পোড়া-চিনি মিশ্রিত পানির পুরু আস্তরণ দেখা গেছে। নদীতে মরা মাছের পাশাপাশি অনেক মাছ খাবি খেতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজনকে গামলা, বালতি ও জাল নিয়ে এসব মাছ সংগ্রহ করছেন।

বাংলাবাজার ঘাটে মো. রুবেল নামে এক শ্রমিককে বালতি দিয়ে ভাসমান মাছ সংগ্রহ করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, সকাল থেকে নদীতে মাছ ভাসছে। আমি এই ঘাটে ১০ বছর ধরে কাজ করছি। আগে কখনো নদীতে এত মাছ ভাসতে দেখিনি।

প্রায় এক কেজি ছোট মাছ সংগ্রহ করতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।

তার মতো আরও অনেক মানুষকে নদীতে মাছ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, দূষণের কারণে নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'মানুষ এই মাছ খেলে লিভার এবং অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।' 

যোগাযোগ করা হলে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, মরা মাছ খেয়ে মানুষের ক্ষতি হবে কিনা তা নির্ভর করবে নদীর পানিতে মিশে যাওয়া কাঁচা চিনিতে কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল তার ওপর। 

পরিবেশকর্মীরা জানান, দূষিত পোড়া-চিনি মিশ্রিত পানি নদীতে মিশে জলজ ভারসাম্য নষ্ট করেছে।

চট্টগ্রামের নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান বলেন, 'পোড়া কাঁচা চিনির রাসায়নিক নদীর পানিতে মিশে মাছ ও জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটাচ্ছে।'

কর্ণফুলী নদী রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় পোড়া মিলের বিষাক্ত পানি নদীতে মিশে যাচ্ছে।

তবে এস আলম গ্রুপের হেড অব এস্টেট মোস্তাইন বিল্লাহ আদিল দাবি করেন, নদীতে পোড়া চিনি মিশ্রিত পানি যাতে না মিশে যায়, সেজন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, 'আমরা নিজস্ব লোকবল ও নিজস্ব এক্সকাভেটর দিয়ে আমাদের জায়গায় ডাম্পিং করছি। এখন আমরা কোনো দূষিত পানি বের হতে দিচ্ছি না...আমাদের নিজস্ব ইটিপি প্লান্ট আছে।'

'যদি এরপরও কিছু পানি নদীতে গিয়ে থাকে, তাহলে কী করব বলুন…এটি এতো বড় একটা বিপর্যয়,' যোগ করেন তিনি। 

চট্টগ্রাম জেলা অফিসের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, তেল বা রাসায়নিক পানিতে মিশে যাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় কন্টিনজেন্সি প্ল্যানের মতো অগ্নিকাণ্ডের পানি আটকে রাখার কোনো পরিকল্পনা পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই।

'যাই হোক, আমরা এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Fakhrul urges EC to work swiftly for fair, acceptable election

Prof Yunus deserves thanks for instructions over polls preparations

1h ago