বাজারে চিনি সংকট: গোপনে চলছে বেশি দামে কেনা-বেচা

চিনি
ছবি: সুমন আলী/ স্টার

বাজারে চিনির সংকট থাকলেও একটি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে চিনি কিনে তা গোপনে বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জরিমানা এড়াতে অনেকেই অনলাইন থেকে চিনি কেনার পর তা গোডাউন বা দোকানে না এনে বাইরেই বিক্রি করছেন।

ব্যবসায়ীরা এটাও বলছেন, কারওয়ান বাজারে কম-বেশি সব দোকানেই চিনি আছে। তবে ভোক্তা অধিকারের জরিমানার ভয়ে কেউ স্বীকার করছেন না। তারা শুধু নিয়মিত কিছু ক্রেতার কাছে চিনি বিক্রি করছেন।

তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, এভাবে বেশি দামে চিনি কেনা-বেচার সুযোগ নেই। কারা বেশি দামে অনলাইনে চিনি বিক্রি করছে সে সম্পর্কে জানেন না তারা।

সরকার খোলা চিনির মূল্য ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির মূল্য ৯৫ টাকা নির্ধারণ করার পর থেকেই বাজারে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে যেসব দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে সেখানে নূন্যমত প্রতি কেজি ১০৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাকে।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা এক রশিদে দেখা যায়, গতকাল বুধবার কারওয়ান বাজারের এক পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী অনলাইন প্রতিষ্ঠান 'মোকাম' থেকে ৫ হাজার ১৭০ টাকা দরে ৪০ বস্তা চিনি কিনেছেন। সে হিসাবে তার প্রতি কেজি চিনির ক্রয়মূল্য পড়েছে ১০৩ টাকা ৪০ পয়সা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যবসায়ী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাড়ি ভাড়া, লেবারসহ অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ১০৪ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে আমার ১৪ টাকা লস হবে। আমি তো আর লস করে কিছু বিক্রি করতে পারব না। যার কারণে আমার স্থায়ী ক্রেতা ছাড়া আর কারো কাছে চিনি বিক্রি করছি না।'

তিনি বলেন, 'আমরা ৯০ টাকার বেশি দামে খোলা চিনি বিক্রি করলে জরিমানা করা হচ্ছে। এই জরিমানার ভয়ে অনেকেই চিনি বিক্রি করছেন না। অনেকে ক্রেতা ধরে রাখতে অনলাইনে বেশি দামে কিনে দোকান থেকে বিক্রি না করে অন্যভাবে বিক্রি করছেন। অনলাইনে আমাদের কাছে চিনির দাম বেশি নিলে আমরা কী করব বলেন?'

'ভোক্তা অধিদপ্তর অনলাইন বিক্রেতা মোকামকে জরিমানা না করে আমাদের করছে। এ কারণে চিনির সংকট তৈরি হয়েছে। তারা জরিমানা না করলে বাজারে বেশি দামে হলেও চিনি পাওয়া যেত, সংকট তৈরি হতো না।'

কারওয়ান বাজারে চিনির পাইকারি বিক্রেতা মেসার্স বেঙ্গল অয়েলের স্বত্বাধিকারী মো. মহিউদ্দিন বলেন, 'কয়েকদিন ধরে একটি কোম্পানি আমাকে চিনি দেবে বলে ঘুরাচ্ছে, কিন্তু দিচ্ছে না। আমরা মিল থেকে চিনি না পেলে কীভাবে বিক্রি করব? আমার কাছে একটি ওষুধ কোম্পানি, একটি চকলেট কোম্পানি এবং কয়েকটি মিষ্টির দোকান নিয়মিত চিনি নেয়। এখন তাদের দিতে পারছি না। ব্যবসায়ীক ক্ষতি তো হচ্ছেই, পাশাপাশি এই নিয়মিত ক্রেতাদের হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।'

'সরকারের উচিত, দ্রুত মিল মালিকদের সঙ্গে বসে এই সমস্যার সমাধান করা', যোগ করেন তিনি।

'মোকাম' নামে অনলাইন সাইটে যে চিনি বেশি দামে বিক্রি করা হয়, এ তথ্যটি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এতদিন জানা ছিল না। কিছুদিন আগে তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জেনেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোকাম থেকে বেশি দামে চিনি কিনে বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। আমরা এতদিন জানতাম না যে মোকাম নামে কিছু আছে। তাদের চিনি বিক্রি করার বৈধ অনুমতি নেই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা খুব শিগগির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।'

অভিযানের ভয়ে চিনি থাকা সত্ত্বেও অনেকে বিক্রি করছেন না— এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই পরিচালক বলেন, 'বিষয়টি আসলে এমন নয়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সংকট পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করছেন। তাই আমাদের অভিযান চলমান আছে।'

'বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণেই মূলত মিলগুলোতে উৎপাদন কমে এই সংকট তৈরি হয়েছে। মিলগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। শিগগির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাজারেও চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক হবে', তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

"The chief adviser said he wants to hold the election between December and June"

2h ago