পেঁয়াজ-আদা-চিনিতে কাটেনি অস্থিরতা, সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি

পেঁয়াজ-আদা-চিনিতে কাটেনি অস্থিরতা, সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রায় এক সপ্তাহ আগে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে সরকার। তবে এখনো পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কাটেনি।

বাজারে আজ শনিবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। তবে ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়।

গত রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার।

৮১ দিন আমদানি বন্ধ থাকার পর গত সোমবার থেকে পুনরায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়। অনুমতির পর প্রথম দিনেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজার ৬২ মেট্রিক টন, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৩৩০ মেট্রিক টন এবং বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে আসে।

এর আগে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে সরকার।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. বাক্কার শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভারত থেকে আমদানি শুরুর পর থেকে যেভাবে পেঁয়াজের দাম কমানোর কথা ছিল, সেভাবে কমেনি। কেজিতে ১০ টাকার মতো কমেছে। দাম কিছুটা কমায় কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো বেশি।' 

একই কথা জানান আরেক ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, 'আমদানির পর দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমায় কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করা কমিয়ে দিয়েছে। তাই পেঁয়াজের দাম তুলনামূলকভাবে কমেনি। তবে বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা ভালো।'

স্টার ফাইল ফটো

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ বছর দেশীয় উৎপাদন ছিল প্রায় ৩৪ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু, মজুত সুবিধার অভাবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে, দেশে এখনো প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে।

পেঁয়াজের মতো আদার বাজারেও এখনো চলছে অস্থিরতা। আজ কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, বার্মা আদা ৩৫০ টাকায় ও কেরালার আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ টাকায়।

আদা ব্যবসায়ী মো. জসিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আদার দাম বেশি। তা ছাড়া চীনা আদা এখন বাজারে নেই। মূলত চীনা আদাই বাজার দখল করে থাকে। চীনা আদার সরবরাহ বেশি থাকলে বাজারে এই অস্থিরতা থাকত না।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে দেশে আদার উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর উৎপাদন কমে হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে হয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে।

ছবি: সুমন আলী/স্টার

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রাসেল আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আদার সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি। আমরা চেষ্টা করছি দাম কমিয়ে আনার। পাহাড়ে যে আদা উৎপাদন হয়, তা বাজারে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামীতে আদার দাম সামান্য কমতে পারে। এ বছর দাম খুব বেশি কমবে না।'

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ভারতের পেঁয়াজ এখনো তেমনভাবে বাজারে আসেনি। তা ছাড়া অনেক পাইকার আগে থেকেই দেশি পেঁয়াজ বেশি দামে কিনেছে। সেসব পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেলে এবং বাজারে ভারতের পেয়াঁজের সরবরাহ আরও বাড়লে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকার নিচে নেমে আসতে পারে।'

চিনির কেজি সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি

বাজারে আজ জায়গাভেদে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় এবং প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গত ১০ মে দেওয়া প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পরিশোধিত খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম প্রতি কেজি ১২৫ টাকা।

তবে নাখালপাড়া, মগবাজার, খিলগাঁও, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও সরকারনির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে না।

সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে ফার্মগেটের এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বেশি দামে কিনলে তো বেশি দামে বিক্রি করবই। সরকার পাইকারি বাজারে দাম কমালে আমরা খুচরা দোকানদাররা কম দামে কিনতে পারব এবং কম দামে বিক্রি করব।'

সে সময় তিনি কিছু রশিদ দেখান, যেখানে দেকা গেছে, প্রতি কেজি চিনি কিনতে হয়েছে ১২৫ টাকায়।

সরকারনির্ধারিত দামে খোলা চিনি বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মেসার্স আমিন জেনারেল স্টোরের সত্ত্বাধিকারী ও পাইকারি চিনি বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিল থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্যাকেটে যে মূল্য দেওয়া আছে, আমাদের কাছেও সেই মূল্যই নেওয়া হচ্ছে। কেউ চাইলে আমরা কাগজ দেখাতে পারব।'

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে এখন যে পরিমাণ চিনি পাওয়া যাচ্ছে, আমরা এখন অভিযান চালালে তাও আর পাওয়া যাবে না। আগামীকাল আমাদের টাস্কফোর্সের মিটিং আছে। সেখানে আমরা বিষয়টি তুলব।'

সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি

বাজারে সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কিছুটা স্বস্তির মধ্যে আছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা ও ক্রেতারা।

আজ কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, সজনে ১০০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪০ টাকায়।

ছবি: সুমন আলী/স্টার

প্রতি ডজন মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, হাঁসের ডিম ১৭০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকায়, গরুর মাংস ৭৫০ টাকায়, ছাগলের মাংস ১ হাজার টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'সব সবজির দাম গত কয়েকদিনের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তবে অন্যান্য জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় চলতে কষ্ট হচ্ছে।'

দাম কমার কথা জানিয়ে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, 'সরবরাহ ভালো আছে, তাই দাম কম। ক্রেতারাও বেশি দামাদামি করছেন না। তবে সার্বিকভাবে বলতে গেলে আগের মতো আর বিক্রি নেই।'

কারওয়ান বাজারে আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কেজি। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

আজ প্রতি কেজি আটাশ চাল (নতুন) বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায় এবং পুরাতন আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকায়। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল (নতুন) বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায় এবং পুরাতন মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।

Comments

The Daily Star  | English
Global fashion brands are reaping triple-digit profits on Bangladeshi garments

Fast fashion, fat margins: How retailers cash in on low-cost RMG

Global fashion brands are reaping triple-digit profits on Bangladeshi garments, buying at $3 and selling for three to four times more. Yet, they continue to pressure factories to cut prices further.

12h ago