সরকার নির্ধারিত দাম ‘কেতাবে’ আছে বাজারে নেই

স্টার ফাইল ফটো

সরকারের বেঁধে দেওয়া ২৯টি পণ্যের দাম কেবল কাগজে কলমে আছে। এসব পণ্যের বেশিরভাগই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার, কচুক্ষেত, ইব্রাহিমপুর ও মিরপুর-১৪ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা আগের বেশি দামেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছেন।

সরকার নির্ধারিত ৯২ টাকা ৬১ পয়সা কেজির খেসারি ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।

বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, বেগুন, কাঁচা মরিচ, টমেটো ও কুমড়ার মতো সবজি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে কিছু খুচরা বিক্রেতা দাবি করেন যে তারা সরকার নির্ধারিত দামের কথা জানতেন না। অন্যরা বলেন, প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ না বাড়লে এই উদ্যোগ কাজে দেবে না।

আবার অনেকে বলছেন পাইকাররা বেশি দর আদায় করায় তারা দাম কমাতে পারছেন না।

কারওয়ান বাজারের একটি মুদি দোকানের মালিক মো. গোফরান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে আমরা যে দামে কিনি  সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তা অনেক কম। সরকার যদি পাইকারি দাম কমাতে পারে, তাহলে আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে পারব।'

এর অর্থ হলো দ্রব্যমূল্যের রাশ টেনে ধরতে সরকারের পদক্ষেপ আবারও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর দাম বাড়ার পর সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালিয়েও ওই দাম কার্যকর করতে পারেনি।

সর্বশেষ গত শুক্রবার উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সিদ্ধান্তের একদিন পর দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বেশিরভাগই অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সরকার নির্ধারিত খাশির মাংসের দাম প্রতি কেজি ১০০৩ টাকা ৫৬ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকায়।

সরকার নির্ধারিত সোনালী মুরগির দাম ২৬২ টাকা হলেও বিক্রি হয়েছে ৩২০-৩৩০ টাকায়।

মসুর, মুগ ও মাসকলাইসহ বিভিন্ন রকমের ডাল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা যায়।

২৯টি পণ্যের মধ্যে শুধু ডিম ও কাতল মাছ সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতি ডিম ১০-১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং প্রতি কেজি কাতল মাছ ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দর নির্ধারণ করার আগে তিন-চার দিন ধরে দাম অপরিবর্তিতই ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত ও নিম্ন আয়ের পরিবারের মানুষ।

অনেক ভোক্তাই বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে আগেও কখনো কাজ হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।

কচুক্ষেত বাজারে আবুল হোসেন নামের একজন ক্রেতা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। শুনেছি ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কিন্তু আমি জানি ওই দাম কার্যকর হবে না।'

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজির হোসেন বলেন, সরকার এর আগেও কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেঁধে দিয়েছিল, কিন্তু সেগুলো খুব কমই কার্যকর হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'কর্তৃপক্ষ শুধু দাম নির্ধারণ করে দেয়, সেগুলো কার্যকর করার ব্যবস্থা নেয়নি। বাজারের প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনা করে দাম নির্ধারণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ব্যবসায়ী, এনবিআর ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে সমাধান বের করে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দে‌ওয়া।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

Several Bangladeshi nationals have alleged that Indian authorities tortured them prior to pushing them across the border.

8h ago