চমেক হাসপাতাল: শয্যা বেড়ে দ্বিগুণ হলেও বাড়েনি চিকিৎসক-নার্স

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। ফাইল ছবি। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের একমাত্র তৃতীয় পর্যায়ের হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৬৬তম বছরে পদার্পণ করলেও এখনো ভুগছে জনবলসহ নানা সমস্যায়।

২ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ৩৪৩ জন চিকিৎসক নিযুক্ত আছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দশক ধরে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে মোট শয্যা ৫০০ থেকে বর্তমান সংখ্যায় উন্নীত করলেও চিকিৎসকের সংখ্যা একই রয়ে গেছে।

৫ বছর আগে হাসপাতালে ৪৩৭ জন নার্সিং স্টাফ ছিলেন। গত কয়েক বছরে নতুন নিয়োগের পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২৮ জনে। কিন্তু হাসপাতাল কর্মকর্তারা বলছেন, ২ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ১ হাজার ২২৮ জন নার্স পর্যাপ্ত নয়।

জনবলের ঘাটতি ছাড়াও হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর অভাব রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ৫৬৫টি পদের মধ্যে ১৭৩টি শূন্য রয়েছে। কারণ বছরের পর বছর ধরে নতুন নিয়োগ হয়নি।

এ ছাড়া, হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় ওষুধও দেওয়া হয় না। যদিও হাসপাতালের নীচতলায় একটি ফার্মেসি রয়েছে, যা ভর্তুকি মূল্যে ওষুধ বিক্রি করে। কিন্তু অনেক ওষুধ সেখানে পাওয়া যায় না। তাই রোগীদেরকে  বাইরে থেকেই ওষুধ কিনে আনতে হয়। রোগীরা প্রায়শই দালালের খপ্পরে পড়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে বেশি দামে ওষুধ কিনে থাকেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩ হাজার ৩০০ জন ভর্তি রোগীকে সেবা দেয়, যা হাসপাতালের শয্যা সক্ষমতার চেয়ে ১ হাজার ১০০ বেশি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, শয্যাগুলো আগে থেকেই রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে অনেক রোগী মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স। বলা বাহুল্য, সঠিক সেবা পেতে সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা।

উদাহরণ হিসেবে তানভীর আহমেদের কথাই ধরা যায়। তিনি হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটে ভর্তি তার বাবার দেখভাল করছিলেন।

তানভীর বলেন, 'আমার বাবার ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ রয়েছে। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগলে হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন তিনি এই হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডার মধ্যে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এভাবে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'ডাক্তার ও নার্সরা অত্যন্ত আন্তরিক। কিন্তু তারা এত রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ওয়ার্ডের টয়লেটও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর।'

'ডাক্তাররা আমার বাবাকে ১০ দিনের জন্য দিনে ২ বার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বাইরের ফার্মেসি থেকে প্রতিটি ট্যাবলেট ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে, হাসপাতালে এর সাপ্লাই নেই', যোগ করেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের নার্সিং স্টাফ এবং চট্টগ্রামের ডিপ্লোমা নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার নাথ বলেন, 'নার্সরা ৩টি শিফটে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ, ১ হাজার ২২৮ জন নার্সের মধ্যে ৪০৯  জনকে প্রতি শিফটে ৩ হাজার ৩০০ জন রোগীকে সেবা দিতে হয়।'

জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান বলেন, 'আরও চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মী নিয়োগ দিতে হলে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করতে হবে। আমরা একটি নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরির কাজ করছি।'

তিনি জানান, তারা অ্যাডহক ভিত্তিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫৪৩ জন কর্মচারী নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।

শয্যা স্বল্পতার বিষয়ে তিনি বলেন, 'হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।'

'আমাদের তহবিলেরও ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর আমরা ১৬ কোটি টাকা বাজেট পাই, কিন্তু বাজেট ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা গেলে আমরা রোগীদের আরও ভালো সেবা দিতে পারব', যোগ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৯৫৭ সালে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম শহরের কেবি ফজলুল কাদের রোডের বর্তমান অবস্থানে এটি স্থানান্তরিত হয়, যেখানে শুরুতে মাত্র ১২০ শয্যা ছিল।

হাসপাতালটিকে ১৯৬৯ সালে ৫০০ শয্যায়, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যায়, ২০০১ সালে ১ হাজার ১০ শয্যায়, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৩১৩ শয্যায় এবং ২০২২ সালের জুনে ২ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Constitution should be updated

Dr Kamal Hossain, emeritus president of Gono Forum, yesterday recommended updating the constitution.

19m ago