বিচ্ছেদের পরও নারীদের স্বামীর কাছে ফিরতে বাধ্য করছে তালেবান

আফগানিস্তানে তালেবানশাসিত সরকার ইসলামের কঠোর ব্যাখ্যা মেনে চলে এবং নারীদের জন্য তারা অতি কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যাকে ‘লিঙ্গ-ভিত্তিক বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। ছবি: এএফপি

বছরের পর বছর ধরে স্বামীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আফগানিস্তানের মারওয়া। সেই নির্যাতনের মাত্রা এতটাই প্রবল ছিল যে, মারওয়ার সবগুলো দাঁত ভেঙে যায়। তবে পাষণ্ড সেই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর অসহায় এই নারী ভেবেছিলেন প্রাণে বেঁচে গেছেন। কিন্তু তালেবান কমান্ডাররা সেই বিবাহবিচ্ছেদ বাতিল করে দেওয়ায় ভয়ে ৮ সন্তানকে নিয়ে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। 

এএফপি জানায়, মারওয়া আফগানিস্তানের অল্প সংখ্যক নারীদের একজন, মার্কিন সমর্থিত সরকারের আমলে যার বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছিল। তবে ২০২১ সালে তালেবান দেশটির ক্ষমতায় এলে তার স্বামী দাবি করেন যে, তাকে তালাক দিতে বাধ্য করা হয়। ফলে তালেবান কমান্ডাররা মারওয়াকে স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

'সেদিন আমি ও আমার মেয়েরা অনেক কেঁদেছিলাম। আমি মনে মনে বললাম, হে আল্লাহ- শয়তানটা আবার ফিরে এসেছে', এএফপিকে বলেন ৪০ বছর বয়সী মারওয়া (নিরাপত্তার কারণে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে)।

আফগানিস্তানে তালেবানশাসিত সরকার ইসলামের কঠোর ব্যাখ্যা মেনে চলে এবং নারীদের জন্য তারা অতি কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যাকে 'লিঙ্গ-ভিত্তিক বর্ণবাদ' বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ।  

দেশটির আইনজীবীরা এএফপিকে জানান, তালেবান কমান্ডাররা বিবাহবিচ্ছেদ বাতিল করে দেওয়ায় বেশ কয়েকজন নারীকে আবার তাদের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

আফগানিস্তানে কর্মরত জাতিসংঘ মিশন জানায়, দেশটিতে প্রতি ১০ নারীর ৯ জন তার সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতনের শিকার।

এতদসত্ত্বেও আফগানিস্তানে বিবাহবিচ্ছেদ নির্যাতনের অপরাধের চেয়েও অধিক ট্যাবু হিসেবে বিবেচিত এবং স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদে যাওয়া নারীদের ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার সংস্কৃতি সেদেশে নেই।

স্বামীর কাছে ফেরার পর মারওয়াকে আবারও মাসের পর মাস ধরে অবর্ণনীয় নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে যেতে হয়েছে। নির্যাতনে তার হাত ভেঙে যায়, আঙ্গুলে চিড় ধরে, তারপরও স্বামী তাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখতেন।

'এমনও দিন গেছে, যখন আমি অচেতন থাকতাম এবং মেয়েরা আমাকে খাইয়ে দিতো', বলেন তিনি।

মারওয়া বলেন, 'স্বামী আমার মাথার চুল এত জোরে টানতেন যে, আমি আংশিক টাক হয়ে গিয়েছিলাম। তার মারধরে আমার সব দাঁত ভেঙে যায়।'

একপর্যায়ে নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে ২ ছেলে ও ৬ মেয়েকে নিয়ে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে আশ্রয় নেন মারওয়া। নিরাপত্তার ভয়ে সেখানে গিয়েও সবাই ছদ্মনাম ধারণ করেন।

মারওয়া বলেন, 'বাচ্চারা এখন বলে- মা, আমরা যদি অনাহারেও থাকি তাতেও সমস্যা নেই, অন্তত এই অমানবিক নির্যাতন থেকে তো মুক্তি পেয়েছি।'

'এখানে কেউ আমাদের চেনে না, এমনকী প্রতিবেশীরাও না', স্বামীর ভয়ে এভাবেই আত্মগোপনে যাওয়ার কথা জানান মারওয়া।

এদিকে, এএফপির প্রশ্নে এক তালেবান কর্মকর্তা জানান, আগে বিবাহবিচ্ছেদে যাওয়া নারীদের জোরপূর্বক তাদের স্বামীর কাছে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে কি না তালেবান সেটি খতিয়ে দেখবে।

তালেবান সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ইনায়াতুল্লাহ বলেন, 'এমন অভিযোগ পেলে শরিয়া অনুযায়ী সেগুলোর তদন্ত করা হবে।'

তবে তালেবান শাসন পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাগুলোকে স্বীকার করবেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বিষয়। দার আল-ইফতা (শরিয়া নিয়ে রায় দেয়) বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

8h ago