‘বি’ গ্রুপে ফেভারিট ইংল্যান্ড, চমক হতে পারে আফগানিস্তান

সবশেষ খেলা পাঁচ ওয়ানডের মধ্যে চারটাই হেরেছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ পাঁচটার মধ্যে হেরেছে সবগুলোই। আফগানিস্তান সবশেষ খেলা পাঁচটার তিনটা জিতলেও গত এক মাসে তারা কোন ম্যাচ খেলেনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে 'বি' গ্রুপের কোন দলকেই তাই সেরা ছন্দে আছে বলা যাচ্ছে না। তবে স্কোয়াডের গভীরতা, বড় আসরের চাপ মিলিয়ে বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকবে জস বাটলারের দল।
অস্ট্রেলিয়া
যে 'গ্রুপে'অস্ট্রেলিয়া আছে সেখানে তারা সবচেয়ে ফেভারিট নয়, এমনটা বিরল। তবে এবার বোধহয় অজিদের কিছুটা পিছিয়েই রাখতে হচ্ছে। তার কারণও মোটামুটি সবার জানা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম যে স্কোয়াড তারা দিয়েছিল সেখানে পাঁচটি বদল করতে হয়েছে।
তাও যে-সে নয়, না থাকা সেই পাঁচজন নাম দেখলে আর কিছু বলার দরকার হয় না- প্যাট কামিন্স, মিচেল মার্শ, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড ও মার্কাস স্টয়নিস। এদের মধ্যে কামিন্স, মার্শ ও হ্যাজেলউড নেই চোটে। স্টয়নিস ওয়ানডে থেকে আকস্মিক অবসরে, স্টার্ক নেই ব্যক্তিগত কারণে।
পাঁচজন শীর্ষ তারকা ছাড়া নামলে যা হতে পারে সেই মহড়া দেখা গেছে শ্রীলঙ্কায়। লঙ্কানদের কাছে দুই ম্যাচের সিরিজে ধোবলধোলাই হয় বিশ্ব ক্রিকেটের সফলতম দল। সেই হারগুলো বেশ বড় ব্যবধানে। স্টিভ স্মিথ ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব পেয়ে আশা দেখালেও সংশয় থেকেই যায়।
অস্ট্রেলিয়া নামের ভার আর ঋদ্ধ ইতিহাস থাকার কারণে এই দলও চ্যাম্পিয়ন হওয়া চমক হবে না। তবে সেমিফাইনালের দৌড়ে গ্রুপে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা নাম তারা নয়। এমনকি দ্বিতীয় অবস্থান পেতেও বেশ বেগ পেতে হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকা দল হিসেবে ভারসাম্যপূর্ণ। টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বাধীন দলে স্ট্রিটিয়ান স্টাবস, হেনরিক ক্লাসেন, এইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলারের মতন ব্যাটার আছেন। তবে ওয়ানডের চেয়ে তারা টি-টোয়েন্টিই বেশি ভালো খেলেন। পাকিস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজে কোন ম্যাচ জিততে পারেনি দলটি। বোলিং আক্রমণে আনরিক নরকিয়াকে না পেলেও কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিদি, মার্কো ইয়ানসেন, কেশব মহারাজ, তাবরাইজ শামসিরা থাকায় সেটা এখনো দারুণ। শেষ পাঁচ ম্যাচ হারলেও প্রোটিয়াদের অস্ট্রেলিয়া থেকে এগিয়ে রাখতে হবে স্কোয়াডের গভীরতার কারণে। বিশেষ করে পাকিস্তানের কন্ডিশনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে একটা টুর্নামেন্ট খেলা কাজে দিবে তাদের।
আফগানিস্তান
ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা রেপুটেশন বিচারে এই গ্রুপে আফগানিস্তান সবচেয়ে দুর্বল দল হওয়ার কথা। তবে দলটি পুরো গ্রুপের হিসেব নিকেশ বদলে দিতে পারে। খেলা যেহেতু হবে উপমহাদেশের কন্ডিশনে, এই কন্ডিশনের দল হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পাবে তারা। হাসমতুল্লাহ শহিদির দলের সবচেয়ে বড় তারার নাম রশিদ খান, তিনি একাই বদলে দিতে পারেন ম্যাচের গতিপথ। এরকম একজন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়কে সহায়তা করতে বেশ কিছু কার্যকর ক্রিকেটার ভর্তি দলটিতে। আজমতুল্লাহ ওমরজাই, গুলবদিন নাইব, মোহাম্মদ নবিরা ব্যাটে-বলে পারদর্শী। আছেন দারুণ ছন্দে থাকা ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজ। সর্বশেষ দুইটি আইসিসি আসরে ভালো খেলা আফগানিস্তান চমক হিসেবে এবার সেমিফাইনাল খেলতে পারে বলে একাধিক বিশেষজ্ঞের মতন। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং তাদের একজন।
ইংল্যান্ড
কদিন আগে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াটওয়াশ হলেও ইংল্যান্ড ঠিকই এই গ্রুপের সেরা হওয়ার জন্য ফেভারিট। সম্ভাব্য সেরা খেলোয়াড়দের সবাইকেই তারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাচ্ছে।
লম্বা সময় পর ফিরে ভারত সিরিজে এতটা ভালো না করলেও জোফরা আর্চার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গতির ঝড় তুলতে পারেন, ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারা মার্ক উডও আছেন দলে। জেমি ওভারটন, ব্রাইডন কার্সের মতন দুজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার দলটির ভারসাম্য তৈরি করেন দারুণভাবে। দুই গতিময় পেসারের সঙ্গে এরা গতির বৈচিত্র্য এনে রাখেন ভূমিকা। আছেন গাস অ্যাটকিনসনের মতন স্যুয়িং মাস্টার।
ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সুবিধা হলো তাদের ব্যাটিং। একাদশে থাকা তাদের সবারই সামর্থ্য আছে রান তোলার। এমনও দেখা যায় যে একাদশের দশজনের আছে প্রথম শ্রেনীতে সেঞ্চুরি! শুরু থেকেই অতি আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার সাহস তাই তারা করতে পারে বাকিদের চেয়ে বেশি। নিশ্চিতভাবে অধিনায়ক জস বাটলারই হবেন দলের অক্সিজেন, বাটলার যদি ছন্দে থাকেন ইংল্যান্ডের বড় রান করা আটকানো কঠিন। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাটলার এমন একজন ব্যাটার যার স্ট্রাইকরেট ১১৬! অন্তত ৫ হাজার রান করেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে বাটলারের স্ট্রাইকরেট বাকি সবার চেয়ে অনেক অনেক বেশি।
হ্যারি ব্রুক, বেন ডাকেট, লিয়াম লিভিংস্টোনরা নিজেদের সামর্থ্যের কাছাকাছিও দিলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দলগুলোর বোলারদের জন্য পার করতে হবে বীভিষিকার মতন সময়।
ম্যাচের সূচি গ্রুপ 'বি'
আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা (২১ ফেব্রুয়ারি, করাচি)
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া (২২ ফেব্রুয়ারি, লাহোর)
অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা (২৫ ফেব্রুয়ারি, রাওয়ালপিন্ডি)
আফগানিস্তান-ইংল্যান্ড (২৬ ফেব্রুয়ারি, লাহোর)
আফগানিস্তান-অস্ট্রেলিয়া (২৮ ফেব্রুয়ারি, লাহোর)
ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা (১ মার্চ, করাচি)
Comments