শি-পুতিন বৈঠক

নজর এখন মস্কোয়

এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রও আছে বিপাকে। ইউক্রেনকে অর্থ ও সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখে নিজ দেশের মানুষের কাছে ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০ মার্চ ২০২৩। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে গতকাল সোমবার মস্কো আসেন সদ্য তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো আলোচনায় বসছেন এই ২ রাষ্ট্রপ্রধান। অনেকেই ভাবছেন শি জিনপিং প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য বলবেন।

১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। এর প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বে। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে বাংলাদেশসহ অন্যান্য অনেক দেশে খাদ্য সংকট ও মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি আরও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রও আছে বিপাকে। ইউক্রেনকে অর্থ ও সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখে নিজ দেশের মানুষের কাছে ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

২ বন্ধু রাষ্ট্র ও তাদের শক্তিশালী রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠক থেকে অনেকের প্রত্যাশা, এর মাধ্যমে এই যুদ্ধ বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের প্রত্যাশা

ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে শি জিনপিংকে অনুরোধ করেছে। ওয়াশিংটন চাচ্ছে—ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার 'যুদ্ধাপরাধ' বন্ধের জন্য শি যেন মস্কোকে চাপ দেয়।

হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র নেড কার্বির বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, তিনি মনে করেন, শুধু যুদ্ধবিরতিই এখন আর যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, 'আমরা আশা করব প্রেসিডেন্ট শি, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইউক্রেনের শহর, হাসপাতাল ও স্কুলে বোমাবর্ষণ, যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা বন্ধ করা এবং সেনা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেবেন।'

'আমাদের আশংকা, এর পরিবর্তে চীন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাবে। এর ফলে ইউক্রেনের সার্বভৌম অঞ্চলে রুশ সেনাবাহিনী থেকে যাবে,' যোগ করেন তিনি।

রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে সরে না গেলে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘ মেয়াদে অর্থপূর্ণ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠক নিয়ে চীন-রাশিয়ার প্রত্যাশা

মস্কো পৌঁছানোর পর শি জিনপিংকে স্বাগত জানায় রুশ সেনাবাহিনী। ছবি: রয়টার্স
মস্কো পৌঁছানোর পর শি জিনপিংকে স্বাগত জানায় রুশ সেনাবাহিনী। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে চীনের প্রস্তাবিত ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলবেন।

পুতিন বলেন, 'আমরা সবসময়ই আলোচনার জন্য প্রস্তুত।'

গত মাসে যুদ্ধ বন্ধের আশায় চীন এ পরিকল্পনাটি প্রকাশ করে। এতে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব রাখা হয়।

তবে চীনের পরিকল্পনায় ইউক্রেনের মাটি থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। অন্যদিকে, ইউক্রেন রুশ সেনা প্রত্যাহারকে শান্তি আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করছে।

রুশ সেনা প্রত্যাহারের পরিবর্তে চীনের পরিকল্পনায় 'সব দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানো' ও 'সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বাস্তবতা মেনে ও ধৈর্যশীল হয়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার' ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনায় 'একপাক্ষিক বিধিনিষেধের' সমালোচনা করা হয়েছে, যা পরোক্ষভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের দেশগুলোর বিধিনিষেধকেই বোঝায়।

গতকাল শি মস্কো এসে পৌঁছানোর পর পুতিন 'ন্যায়বিচারের নীতি অনুসরণ' ও 'প্রত্যেক দেশের জন্য একই ধরনের নিরাপত্তা' ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চীনের প্রশংসা করেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীন সার্বিক উন্নয়নে প্রভূত অগ্রগতি অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা কিছুটা ঈর্ষান্বিতও বোধ করি।'

প্রত্যুত্তরে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, 'আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রাশিয়া সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি দেখেছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে রাশিয়ার জনগণ আপনার প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখবে।'

শি মস্কোয় পৌঁছানোর আগে পুতিন চীনের পিপলস ডেইলি সংবাদপত্রকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতি দেশ ২টিকে দুর্বল করতে পারবে না।

ইউক্রেনের মনোভাব

ইউক্রেনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠক অথবা ফোনালাপের আয়োজনে ব্যস্ত বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এই উদ্যোগের বিষয়টি কিয়েভ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।

এই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন জন কার্বি। তিনি শি জিনপিংকে এই সংঘাতে বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা রেখে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান।

কিয়েভের আশংকা, চীন-রাশিয়ার প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক সামরিক সুসম্পর্কের দিকে মোড় নিতে পারে। অর্থাৎ, দেশটি মস্কোকে কামানের গোলাবারুদ ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে পারে।

কিশিদার আকস্মিক কিয়েভ সফর

শি কে পুরনো বন্ধু বলে অভিহিত করেন পুতিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
শি কে পুরনো বন্ধু বলে অভিহিত করেন পুতিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

এমন পরিস্থিতিতে জাপান ঘোষণা দিয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আজ মঙ্গলবার কিয়েভে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন। এ মুহূর্তে কিশিদা ভারত সফরে আছেন।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিশিদা ইউক্রেনের প্রতি জাপানের 'একাত্মতা ও নিরবচ্ছিন্ন সহায়তার' বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করবেন। তিনি 'নিজ মাতৃভূমি রক্ষায় ইউক্রেনের জনগণের দেখানো সাহস ও অধ্যবসায়ের' প্রতি সম্মান জানাবেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান করবেন এবং আইনের শাসনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতি তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আবারও জানাবেন।

আগামীকাল বুধবার কিশিদা পোল্যান্ড যাবেন বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধের মধ্যে আছে এমন কোনো দেশে জাপানের কোনো সরকার প্রধানের এটাই প্রথম সফর।

পশ্চিমের প্রত্যাশা, কিশিদা ইউক্রেনের পক্ষ নেবেন এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের বিষয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করবেন।

পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধী আদালত (আইসিসি) রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তিনি দখলকৃত ক্রিমিয়া ও দনেৎস্ক সফর করেছেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ২ শক্তিশালী এশীয় রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের এই ২ সফর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দ্বিধাবিভক্ত মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে।

জাপান যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহযোগিতা দিয়েছে। অপরদিকে, চীন এখনো রাশিয়ার প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখে চলছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়াকে চাপের মুখে রাখলেও ইউক্রেনে এখনো আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।

তবে পশ্চিমের এই বিধিনিষেধে যোগ দেয়নি চীন ও ভারতসহ অনেক দেশ।

Comments

The Daily Star  | English

Banks mostly gave loans to their owners rather than creditworthy borrowers

Bangladesh’s banking sector was not well-managed in recent years. Banks mostly gave loans to their owners, rather than to creditworthy entities. Consequently, several banks are now in difficulty.

11h ago